
ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবে দীর্ঘ এক যুগেও কোন নির্বাচন হয়নি চট্টগ্রাম চেম্বারের। স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে যারা খুশি রাখতে পেরেছেন তারাই ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বারের হর্তাকর্তা। সেই অন্ধকার সময়ের এক যুগ পর আগামী ১ নভেম্বর অবশেষে হতে চলেছে চট্টগ্রাম চেম্বারের কাঙ্খিত নির্বাচন।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন বোর্ডের প্রধান ও চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক মনোয়ারা বেগম। তিনি জানান, আগামী ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগরের আগ্রাবাদ এলাকায় অবস্থিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে চেম্বারের নির্বাচন। সোমবার বিকেলে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০ আগস্ট গ্রুপ ও টাউন অ্যাসোসিয়েশন সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের প্রতিনিধি ঠিক করা হবে। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর নির্বাচনি বোর্ড প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে ১৪ সেপ্টেম্বর। ফরম বিক্রি চলবে ১৪ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর। জমাদানের শেষ তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর। ২৫ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও ৫ অক্টোবর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।
সূত্র মতে, নির্বাচন বোর্ডের সদস্য হিসেবে আছেন-অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান এবং বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (সাধারণ শাখা) আহমেদ হাছান। এর মধ্যে সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট গ্রহণ যাতে অনুষ্ঠিত হয় সেভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান।
ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম চেম্বার পরিচালনায় নির্বাচিতরা দুই বছর দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পান। চেম্বারের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর ভোট ছাড়াই চেম্বার পরিচালনায় নেতা নির্বাচন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন চট্টগ্রাম চেম্বারে সব সময় প্রভাব খাটিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ ও খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মাহবুবুল আলম।
প্রভাব খাটিয়ে মাহবুবুল আলম টানা পাঁচবার চেম্বারের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি ২০২৩ সালের ২ আগস্ট এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদের ২০২৩-২৫ মেয়াদে সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু সরকারের পটপরিবর্তনের পর গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে ইমেইল পাঠিয়ে পদত্যাগ করেন তিনি।
চট্টগ্রাম চেম্বার পরিচালনায় নেতা নির্বাচন হতো পরিবারকেন্দ্রিক; যার প্রমাণ সর্বশেষ কমিটিতেও দেখা গেছে। সর্বশেষ ২০২৩-২৫ মেয়াদের কমিটিতে সভাপতি করা হয় ওমর হাজ্জাজকে। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফের ছেলে। পাশাপাশি ওই কমিটিতে সহসভাপতি করা হয় মাহবুবুল আলমের মেয়ে রাইসা মাহবুবকে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর চট্টগ্রাম চেম্বার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের পদত্যাগের জন্য দফায় দফায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। পরে চেম্বারের সভাপতি ও দুই সহসভাপতিসহ ২১ পরিচালক পদত্যাগ করেন।
এরপর গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসকের দায়িত্ব নেন তৎকালীন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা। শুরুতে তার মেয়াদ ছিল ১২০ দিন। পরে আরও দুই দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ৩ জুলাই এর প্রজ্ঞাপনে তার মেয়াদ আরও ৬০ দিনের জন্য বাড়ানো হয়। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে তার মেয়াদ।
এ অবস্থায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার এবার দলীয় প্রভাব ও পরিবারতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসবে এমনটাই আশা করছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, চেম্বারের নির্বাচনটা সময়মতো সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হোক, সেটাই আমরা চাই। নির্বাচন ছাড়া চেম্বার পরিচালনা করা কঠিন।
তিনি বলেন, চেম্বারের কাজ হলো ব্যবসায়ী ও সরকারের মধ্যে ব্রিজ হিসেবে কাজ করা। সুতরাং এত বছর চেম্বারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। আমরা আশা করছি, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে চেম্বার পরিচালিত হবে এবং ব্যবসায়ীদের সমস্যা দূর হবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম চেম্বারের ২৪ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের ১২ জন পরিচালক সাধারণ সদস্যদের ভোটে, ছয়জন পরিচালক সহযোগী সদস্যদের ভোটে, তিনজন পরিচালক টাউন অ্যাসোসিয়েশন থেকে ও তিনজন পরিচালক ট্রেড গ্রুপ থেকে নির্বাচিত হন।