
চট্টগ্রাম মহানগরীতে স্কুলশিক্ষার্থীদের জন্য চালু করা ১০টি বাস এখন বন্ধ হওয়ার পথে। স্টাফ মেনটেন্যান্স খরচ ও জ্বালানির টাকার সংকটের কারণে এসব বাস চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনকে (বিআরটিসি)।
তবে বাসগুলো চালু রাখার জন্য ¯পন্সর খুঁজছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। স্পন্সর পাওয়া গেলে শিক্ষার্থীদের জন্য এ বাসগুলো চালু রাখা সম্ভব হবে বলে জানান বিআরটিসির ম্যানেজার (অপারেশন) জুলফিকার আলী।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের অনুরোধে গত আটমাস ধরে বাসগুলো আমরা নিজস্ব খরচে চালাচ্ছি। জিপিএইচ ই¯পাত পৃষ্ঠপোষকতা বাতিলের চিঠি দেওয়ার পর গত আট মাসে মাত্র দুইটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে ভাড়াবাবদ আমরা ৯০ হাজার টাকা পেয়েছি। তবে জিপিএইচ ই¯পাতের লোগো এখনও বাসগুলোতে রয়েছে। যদি নতুন স্পন্সর পাওয়া না যায় তাহলে আমরা এই প্রকল্পটি আর চালিয়ে যেতে পারবো বলে মনে হয় না।
জুলফিকার আলী বলেন, বাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের সংকট নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকে যদি ৫টাকা ভাড়া যথাযথভাবে প্রদান করতো তবে আমরা কিছুটা ভর্তুকি দিয়ে চালিয়ে নিতে পারতাম। তারা এ টাকাটাও প্রদান করছে না বিধায় আমাদের চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিটি বাসের জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ এবং চালক-হেলপারের বেতনের যোগান দিতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। তিনি এটার সমাধান দিবেন বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, আমরা বাসগুলো পরিচালনা করার জন্য নগরীর স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সাথে কথা বলেছি। সে সাথে তাদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের ধার্য করা ৫ টাকা করে হিসেব করে যে টাকা আসছে, তা দিয়েও বাসগুলো চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা পৃষ্ঠপোষক খুঁজছি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে আলাপ চলছে। আমরা চাই না স্কুল বাসবন্ধ হয়ে যাক। আমি মনে করি, এটা অস্থায়ী সমস্যা। দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।
বিআরটিসি ও জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের উদ্যোগে চালু হয় স্মার্ট স্কুলবাস সার্ভিস। নগরীর পাঁচটি রুটে ১০টি দোতলা বাসে প্রতিদিন ২ হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক চলাচল করতেন।
জিপিএইচ ই¯পাত তাদের ব্র্যান্ডের লোগো বাসগুলোতে ব্যবহারের বিনিময়ে বিআরটিসিকে মাসে ৬ লাখ টাকা করে দেয়ার চুক্তি হয়। এ চুক্তিটি ছিল ২ বছরের জন্য। এরপর প্রথম বছর এগিয়ে যায় প্রকল্পটি। প্রকল্পের সাফল্যের জন্যই স্মার্ট স্কুল বাস আইডিয়াটি জিতে নেয় প্রথম পুরস্কার। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে জেলা প্রশাসক গ্রহণ করেন ৮০ লাখ টাকার চেক।
কিন্তু বাস্তবতার কঠিন ধাক্কা সামলাতে পারেনি উদ্যোগটি। জিপিএইচ ই¯পাত প্রথম বছরে ৭২ লাখ টাকা খরচ বহন করলেও দ্বিতীয় বছরে জানিয়ে দেয়- ব্যবসা মন্দা, তাই আর অর্থায়ন সম্ভব নয়। ফলে ২০২৫ সালের শুরুতেই বাসগুলো চালানো নিয়ে তৈরি হয় সংকট। প্রতি মাসে ৬ লাখ টাকার ঘাটতি মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বিআরটিসি।
সচেতন মহলের মতে, প্রকল্প চালুর সময় তড়িঘড়ি করে ¯পন্সরশিপ দিয়েছিল জিপিএইচ ই¯পাত। কিন্তু সুবিধা নেওয়ার পর তারা বিভিন্ন অজুহাতে সরে দাঁড়াচ্ছে। প্রথম থেকেই বাসগুলোতে টিকিট ব্যবস্থা না রেখে ভাড়ার বাক্স রাখা হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় পাঁচ টাকা করে দেবে- এমন পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বাস্তবে খুব কম শিক্ষার্থীই সেই টাকা দেয়। এখন জেলা প্রশাসন ২২টি স্কুলের সঙ্গে বৈঠক করেছে। শিক্ষার্থীদের বেতনের সঙ্গে বাসভাড়া অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ চলছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, স্মার্ট স্কুল বাস প্রকল্পে জিপিএইচ ই¯পাত অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ায় একটি আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে অর্থ সংগ্রহের বিষয়টি সঠিকভাবে পরিচালনার চেষ্টা করছি এবং পাশাপাশি নতুন কয়েকটি কো¤পানির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা যদি ¯পন্সর করে তাহলে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।