মঙ্গলবার- ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

সাবেক এমপিদের ৩০ গাড়ি যাচ্ছে সরকারি পরিবহণ পুলে

সাবেক এমপিদের ৩০ গাড়ি যাচ্ছে সরকারি পরিবহণ পুলে

নিলামে গ্রহণযোগ্য দর না পাওয়ায় সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৩০টি গাড়ি সরকারের কাছে হস্তান্তরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) এমন তথ্য জানান চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার (প্রিভেন্টিভ) কবির আহমদ। তিনি জানান, গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরে এক কর্মশালায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এ সিদ্ধান্ত নেন।

কবির আহমদ জানান, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গাড়িগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করেছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্যরা, যাদের অধিকাংশই ছিলেন আওয়ামী লীগের।

ওই বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর গত ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। একই সাথে শুল্কমুক্ত সুবিধাও বাতিল করে এনবিআর। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পালিয়ে যাওয়া সংসদ সদস্যরা গাড়িগুলো আর ছাড় করেননি।

আমদানি করা মোট ৪২টি গাড়ির মধ্যে ২৪টি গাড়ি গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম দফায় নিলামে বিক্রির জন্য তুলেছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস। তবে গাড়িভেদে সর্বোচ্চ ১ লাখ থেকে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দর দেন আগ্রহী ক্রেতারা, যা গাড়িগুলোর বাজারদরের চেয়ে অস্বাভাবিক কম। ভিত্তিমূল্যের চেয়ে দর কম হওয়ায় তা ছাড় দেয়নি কাস্টমস। এ অবস্থায় প্রথম ধাপে ৩০টি গাড়ি সরকারকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

আরও পড়ুন :  নির্বাচন কমিশন প্রতীকের সংখ্যা বাড়াতে-কমাতে পারে : সিইসি

কর্মশালায় চেয়ারম্যান বলেন, সিদ্ধান্ত হলো, এগুলো (গাড়ি) আলটিমেটলি আমরা আমাদের সরকারকে দিয়ে দেব। সরকার এগুলো ব্যবহার করবে। এগুলো আমাদের সরকারের জনপ্রশাসনে গাড়ির যে পরিবহণ পুল আছে, সেই পুলে যাবে, এরপর এগুলো সরকারের যারা ব্যবহার করেন, তারা ব্যবহার করবে।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, এটা আমরা করছি যে, কারণ আমরা দেখেছি, এগুলো যখন আমরা নিলাম করলাম, খুবই অল্প দাম উঠেছে। নিলামের টাকাটাও যে সরকারের কোষাগারে আসবে, আবার সরকারকেই এসব গাড়ি কিনতে হবে অনেক দাম দিয়ে। আমরা জাতীয় স্বার্থ চিন্তা করে এসব গাড়ি সরকারের পরিবহণ পুলকে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ৩০টা গাড়ি, সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।

কাস্টমসের তথ্যমতে, শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানিকারকদের মধ্যে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সানজিদা খানম, মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর, সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, অনুপম শাহজাহান জয়, সাজ্জাদুল হাসান, মো. সাদ্দাম হোসেন পাভেল, তারানা হালিম, নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, মো. আবুল কালাম আজাদ, আবদুল মোতালেব, শাম্মী আহমেদ, মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ, রুনু রেজা, মো. তৌহিদুজ্জামান, শাহ সারোয়ার কবীর, একরামুজ্জামান, এস এম আল মামুন, এস এম কামাল হোসেন, মুজিবুর রহমান, মো. আসাদুজ্জামান, নাদিয়া বিনতে আমিন ও আখতারউজ্জামানসহ আরও কয়েকজন ছিলেন।

আরও পড়ুন :  সিএমপির ‘মানিলন্ডারিং’ তালিকায় ১৪৫ নেতা ও মন্ত্রী-এমপির নাম

কাস্টমস শুল্ক-করসহ গাড়িগুলোর প্রতিটির সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করেছিল ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রথম নিলামে ৬০ শতাংশ বা তার বেশি সর্বোচ্চ দরদাতা এ গাড়ি কিনতে পারবেন। এ হিসেবে প্রতিটি গাড়ি কিনতে ন্যুনতম ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা দর দিতে হতো। ২৫ শতাংশ করসহ এই গাড়ির সর্বনিু দাম পড়ে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। গাড়িগুলো নিলামে বিক্রির মাধ্যমে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ১৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের আশা করেছিল।

উল্লেখ্য, এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৮ সালের ২৪ মে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়। এরশাদের পতনের পরও এ সুযোগ বহাল থাকে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক সংসদ সদস্য তাদের পাঁচ বছরের মেয়াদে একটি করে গাড়ি আমদানি করতে পারেন।

আরও পড়ুন :  সিএমপির ‘মানিলন্ডারিং’ তালিকায় ১৪৫ নেতা ও মন্ত্রী-এমপির নাম

সে অনুযায়ী ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় ৫৭৬টি গাড়ি আমদানি করেন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ৫১ জন সংসদ সদস্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে আসা এসব গাড়ির মধ্যে মধ্যে ছয়জন খালাস নেন। সাধারণত আমদানি করা গাড়ি ৩০দিনের মধ্যে বন্দর থেকে খালাস না নিলে সেগুলো নিলামযোগ্য হয়ে যায়।

এছাড়া, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা যে কোনো পণ্য চারদিন পর্যন্ত বন্দরের শেডে বিনা শুল্কে রাখার সুযোগ পায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। এর পর থেকে প্রতি চার দিন পর পর ২০ ফুট সাইজের কন্টেইনারের জন্য ৬ মার্কিন ডলার এবং ৪০ ফুটের জন্য ১২ মার্কিন ডলার মাশুল আদায় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

ঈশান/বেবি/মখ

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page