
# আগে ক্ষমতা দেখিয়েছেন ফ্যাসিবাদের, এখন উপদেষ্টার
# শতভাগ কাজের নামে ফকির বানাচ্ছেন ঠিকাদারদের
# উল্টো সাফাই গাইছেন নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আলী
উপজেলা প্রকৌশলী জয়শ্রী দে আর সার্ভেয়ার মো. মোরশেদ মিলে গিলে খাচ্ছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার স্থানীয় সরকার পরিষদের (এলজিইডি) উন্নয়ন বরাদ্দ। শতভাগ কাজের নামে ঠিকাদারদের কাছ থেকে সুকৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছেন বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা।
যা জেনেও চুপ চট্টগ্রাম জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান আলী। উল্টো তাদের পক্ষে সাফাই গাইছেন তিনি। ঠেকিয়ে রেখেছেন বদলিও। তাতে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে ঠিকাদারদের মনে। যা দেখারও কেউ নেই যেন। এমন অভিযোগ একাধিক ঠিকাদারের।
ঠিকাদারদের মতে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার মতো হাটহাজারী উপজেলার সড়ক উন্নয়নেও ব্যাপক কাজ চলছে স্থানীয় সরকার পরিষদের (এলজিইডির)। কিন্তু প্রতিটি কাজের বরাদ্দ থেকে নির্ধারিত ৫% কমিশন হাতিয়ে নিচ্ছেন উপজেলা প্রকৌশলী জয়শ্রী দে। তবে ওই টাকা নিজ হাতে নেন না তিনি। সার্ভেয়ার মোরশেদ হচ্ছেন তার ক্যাশিয়ার।
এরপর মোরশেদকেও দিতে হয় ৩% কমিশন। যা গুণে নেন মোরশেদ। এরপর কাজ শুরু হলে জয়শ্রী দে ও মোরশেদ ভিজিটের নামে একাধিকবার গাড়ি ভাড়া, আপ্যায়নসহ খুশির নামে টাকা দিয়ে ব্যাগ ভরিয়ে দিতে হয় ঠিকাদারদের। বিশেষ করে কার্পেটিং ও আরসিসি ঢালাইয়ের সময় টাকা হাতানোর উৎসব চলে মোরশেদের।
এরপর কাজ শেষে শতভাগ কাজ হয়নি বলে শুরু হয় আরেক হয়রানি। তখনও পারসেন্টিস না দিলে বিল নিয়ে শুরু হয় লম্ফজম্ফ। তখনও দিতে হয় থোক পেমেন্ট। এভাবে একটি কাজের ৩০-৪০ ভাগ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন উপজেলা প্রকৌশলী জয়শ্রী দে ও সার্ভেয়ার মোরশেদ।
অভিযোগ রয়েছে, জয়শ্রী দের বিশ্বস্ত ক্যাশিয়ার হওয়ায় সাব এসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ারের কাজও করায় সার্ভেয়ার মোরশেদকে দিয়ে। বিশেষ সুবিধার কারণে উপজেলার শতকরা ৮০ ভাগ কাজ তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয় সার্ভেয়ার মোরশেদকে। বাকি ২০ ভাগ কাজ তদারকির দায়িত্ব পান সাব-এসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়াররা। যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও নিয়ম বহির্ভুত। এতে কাজের গুণগত মানও সঠিকভাবে নিরূপণ হচ্ছে না।
এক্ষেত্রে এক সময় তারা ফ্যাসিবাদের শক্তি ব্যারিষ্টার আনিসুলের ক্ষমতা দেখিয়ে নানা অনিয়ম করতেন। বর্তমানে অন্তবর্তী সরকারের হাটহাজারীর এক উপদেষ্টার কাছের মানুষ পরিচয়ে করছেন। আর হাতিয়ে নিচ্ছেন উন্নয়ন বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা। অন্যদিকে সর্বস্ব হারাচ্ছেন ঠিকাদাররা।
ঠিকাদাররা জানান, এলজিইডির উন্নয়ন কাজে জয়শ্রী দে ও মোরশেদ ছাড়াও আরও কয়েকটি টেবিলে খরচ দিতে হয়। যা ন্যুনতম হওয়ায় এ নিয়ে কোন আপত্তি নেই ঠিকাদারদের। তবে জয়শ্রী দে ও মোরশেদের কারণে এই উপজেলায় এলজিইডির কাজ করে পথের ফখির হয়ে গেছেন অগণিত ঠিকাদার। ব্যবসার স্বার্থে অনুরোধের প্রেক্ষিতে তাদের নাম গোপন রাখা হয়েছে।
ঠিকাদাররা আরও জানান, উপজেলা প্রকৌশলী জয়শ্রী দে ও সার্ভেয়ার মোরশেদ নানা অনিয়ম-দূর্নীতির মাধ্যমে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই উপজেলার এলজিইডির উন্নয়ন বরাদ্দ গিলে খাচ্ছে। এদের অনিয়মে অতিষ্ঠ হয়ে হাটহাজারী উপজেলা ছাড়া অন্য উপজেলার ঠিকাদাররা টেন্ডারে অংশগ্রহণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
এ বিষয়ে এলজিইডির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ দায়ের করা হলে সার্ভেয়ার মোরশদকে দু‘বার বদলি করা হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আলী নিজের স্বার্থে সেই বদলি ঠেকিয়ে রেখেছেন।
যার প্রমাণ মিলল আলাপেও। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান আলী সার্ভেয়ার মোরশেদকে অত্যন্ত ভাল পোয়া (ছেলে) উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মোরশেদ সার্ভেয়ার হলেও সে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। চট্টগ্রামের সবকটি উপজেলার যে কোন সাব-এসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ারের চেয়ে সে কাজ ভাল বুঝে।
এই কারণে তাকে সাব-এসিসটেন্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। সে শতভাগ কাজ আদায় করে। এ কারণে অভিযোগ দিয়ে তাকে বদলি করিয়েছেন ঠিকাদাররাই। কিন্তু কাজের স্বার্থে তার বদলি কার্যকর করা হয়নি। তবে আপনারা আপত্তি যখন করতেছেন আমি তাকে বদলি করে দেব। উপজেলা প্রকৌশলী জয়শ্রী দেও বদলি হয়ে যাবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারী উপজেলা প্রকৌশলী জয়শ্রী দে বলেন, ঠিকাদারদের অভিযোগ মিথ্যা। আমার অফিসে একাউনটেন্ট আছে। সার্ভেয়ার মোরশেদ কেন আমার ক্যাশিয়ার হবে। সে তো ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। সার্ভেয়ার হলেও সে কাজ ভাল বুঝে। তাছাড়া আমার এখানে সাব-এসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সংকট রয়েছে। এ কারণে তাকে দিয়ে সাব-এসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ারের কাজ করানো হয়। ঠিকাদার থেকে কোন সময় কোনরকম কমিশন নেওয়া হয়নি। শতভাগ কাজ চাওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে।
জানতে চাইলে সার্ভেয়ার মোরশেদ বলেন, সার্ভেয়ার হলেও ম্যাডাম আমাকে দিয়ে সাব-এসিসটেন্ট ইঞ্জিনিয়ারের কাজ করায়। কমিশন নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। স্বার্থে আঘাত লাগায় ঠিকাদাররা মিথ্যা অভিযোগ করছে। উপদেষ্টার দাপট দেখানোর অভিযোগও সঠিক নয়। নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার আমাকে ভাল জানায় এখানে রেখে দিয়েছেন।