বুধবার- ৫ নভেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে হুম্মাম-হেলালসহ প্রায়ই নতুন মুখ

চট্টগ্রামে হুম্মাম-হেলালসহ প্রায়ই নতুন মুখ

# কপাল পুড়ল আসলাম চৌধুরীর, সমর্থকদের সড়ক অবরোধ
# খালি রাখা হয়েছে ৬ আসন, তম্মধ্যে জোটের জন্য রয়েছে এক আসন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১০টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ আমলে গুমের শিকার হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও ব্যারিষ্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনসহ অর্ধেক প্রার্থীই নতুন মুখ। বাদ পড়েছেন হেভিওয়েট প্রার্থী আসলাম চৌধুরী।

যা দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনুসারি নেতাকর্মীরা সোমবার (৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের সীতাকুন্ড অংশ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এছাড়া খালি রাখা হয়েছে আরও ৬ আসন।

এর মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম-৪ কোতোয়ালি আসন নিয়ে। এ আসন থেকে নির্বাচন করার কথা ছিল বর্তমান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সেই আসনটিও খালি রাখা হয়েছে। আবার দলের অনেক নেতা দাবি করেছে এ আসনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির বিতর্কিত নেতা আবু সুফিয়ানকে রাখা হয়েছে।

সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এতে চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে উত্তর জেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) আসনে যুবদল নেতা কাজী সালাউদ্দিন, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক স¤পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন।

এছাড়া চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে দক্ষিণ জেলার সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি সেগুলো হলো- চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া), চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা), চট্টগ্রাম-১৩ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) ও চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক)। এর মধ্যে কোতোয়ালি-বাকলিয়া আসনে প্রথমে নগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও পরে সেটা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

এদিকে প্রার্থী ঘোষণার সাথে সাথে চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়ে সেই খবর। এরপর রাতেই চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া-৭ আসনে আনন্দ মিছিল শুরু করে নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে সীতাকুন্ডে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা। তারা চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন গভীর রাত পর্যন্ত।

এদিকে চট্টগ্রামের বন্দর-পতেঙ্গা আসন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নিজস্ব আসন হিসেবে পরিচিত। তিনি ওই আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু এবার তিনি পাশের আসন ডবলমুরিং-হালিশহর থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। ওই আসনে বিএনপি প্রয়াত নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান দুইবার প্রার্থী হয়েছিলেন। এবার নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান ওই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। বন্দর-পতেঙ্গা আসনে আমীর খসরুর ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইসরাফিল খসরু চৌধুরীকে প্রার্থী করা হবে বলে আলোচনা আছে।

রাঙ্গুনিয়া থেকে হুম্মাম কাদের চৌধুরী প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। ওই আসন থেকে হুম্মামের বাবা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার সেই প্রয়াত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সন্তান হুম্মাম কাদের চৌধুরীর প্রতি দলীয় নেতাকর্মীদের প্রচুর সহানুভূতি রয়েছে। যে কারণে শুরু থেকেই মনোনয়ন পাওয়ার জোর আলোচনায় ছিলেন হুম্মাম কাদেও চৌধুরী।

মনোনয়ন না পাওয়ায় আসলাম চৌধুরীর সমর্থকরা হতবাক
এদিকে সীতাকুন্ড আসন থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আসলাম চৌধুরী মনোনয়ন না পাওয়ায় হতবাক হয়েছেন তার অনুসারী নেতাকর্মীরা। তিনি প্রায় ১০ বছর কারাবন্দি ছিলেন। আসলামকে মনোনয়ন না দেওয়ার প্রতিবাদে সীতাকুন্ডের বিভিন্ন স্থানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন তার অনুসারীরা।

সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে উপজেলার সিটি গেট, ফৌজদারহাট, জলিল, ভাটিয়ারী, বারআউলিয়া, জোড় আমতল ও কুমিরায় মহাসড়ক অবরোধ করে এবং ট্রায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এসময় তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। এতে পুরো উপজেলায় মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও সমর্থকরা মহাসড়ক থেকে না সরতে অস্বীকৃতি জানায়।

যাত্রীরা জানান, সন্ধ্যার পর থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা একে একে বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যারিকেড দিলে দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তি দেখা দেয়। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী এক যাত্রী নুরুল আজিম বলেন তার কারটি সীতাকুন্ডে প্রবেশ করার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে তিনি কুমিরা এসে আটকে পড়েন। রাত সাড়ে ১০টাতেও তিনি বার আউলিয়া এলাকায় আটকে ছিলেন। এরকম হাজার হাজার যাত্রী ও গাড়িচালক চরম দুর্ভোগে পড়েন।

আসলাম চৌধুরী সমর্থিত নেতাকর্মীরা বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে দীর্ঘ ৯ বছর কারাবরণ করেছে আসলাম চৌধুরী। শুধু শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শকে লালন-পালন করতে গিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন আসলাম চৌধুরী। নেতাকর্মীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত মহাসড়কে থাকার ঘোষণা তাদের।

আসলাম চৌধুরীর সমর্থক ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব হেলাল উদ্দিন বাবর বলেন, সীতাকুন্ডের বিএনপিকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা নেমেছে একটি গুষ্টি। তারই জ্বলন্ত উদাহরণ আজকের মনোনয়ন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছেন নেতাকর্মীরা।

তিনি হুঁশিয়ারি করে বলেন, সীতাকুন্ড আসনে বিএনপির রাজনীতিতে আসলাম চৌধুরীর কোনো বিকল্প নেই। এই মনোনয়ন যতক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যাহার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত মহাসড়কে অবস্থান করবে নেতাকর্মীরা।

উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব কাজী মহিউদ্দিন বলেন, বিএনপি থেকে কাকে মনোনয়ন দেবে সেটা দলের বিষয়। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করছে আমি মনে করি তারা দলের বিরুদ্ধে আচরণ করছেন।

‎বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল মুমিন বলেন, মনোনয়নপত্র ঘোষণার পর থেকেই আসলাম চৌধুরীর সমর্থিত বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। যার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশে গাড়ি চলাচল গভীর রাত পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে।

বিএনপির চার নেতা বহিষ্কার
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) আসনে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও সড়ক অবরোধের ঘটনায় সীতাকুন্ড উপজেলা বিএনপির চার নেতাকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

সোমবার (৩ নভেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে সই করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

বিবৃতিতে জানানো হয়, সোমবার সন্ধ্যার পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সীতাকুন্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কদমরসুল, ভাটিয়ারী বাজার ও জলিল গেইট এলাকায় সহিংসতা, হানাহানি ও সড়ক অবরোধসহ জনস্বার্থবিরোধী কর্মকান্ড সংঘটিত হয়।

এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সীতাকুন্ড উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আলাউদ্দিন মনি, সাধারণ স¤পাদক হেলাল উদ্দিন বাবর, সীতাকুন্ড পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মামুন এবং যুবদলের সোনাইছড়ি ইউনিয়ন শাখার সাধারণ স¤পাদক মমিন উদ্দিন মিন্টুকে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব স্তরের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা সবাই আসলাম চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

জোটের জন্য বরাদ্দ চট্টগ্রাম-১৪ :
জোটগতভাবে নির্বাচন করলে চট্টগ্রাম-১৪ আসনটি (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক) শরীকদল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) ছেড়ে দিবে বিএনপি। তাই গতকাল এ আসনে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। যদিও এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক স¤পাদক ডা. মহসিন জিল্লুর করিম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এবং বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম রাহী।

এ বিষয়ে বিএনপির সাংগঠনিক স¤পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, চট্টগ্রাম-১৪ আসনটি জোটকে ছেড়ে দেয়া হবে। বাকি আসনগুলোতে দ্বিতীয় ধাপে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।

ঈশান/খম/মম

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page