
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন চৌধুরী প্রকাশ মেজর ইকবালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১০ নভেম্বর) দিনগত রাতে রাউজান উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ইকবাল একই গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের ছেলে।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে এই তথ্য জানান রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, অস্ত্রসহ অবস্থান করছেন এমন খবরে সোমবার দিনগত রাতে অভিযান চালিয়ে মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন চৌধুরী প্রকাশ মেজর ইকবাল নামে সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি জানান, তাঁর কাছ থেকে কোনো অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। অস্ত্র থাকার কথা তিনি স্বীকারও করেননি। পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁকে রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
ওসি আরও জানান, মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন চৌধুরী প্রকাশ মেজর ইকবাল বিরুদ্ধে অন্তত ৪০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু মামলায় তিনি জেলও খেটেছেন। বর্তমানে মামলা বিচারাধীন রয়েছে ১১টি। যার মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা।
পুলিশ জানায়, আগে আওয়ামী লীগের রাউজান আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে কাজ করতেন ইকবাল। বর্তমানে রাউজানে বিএনপির এক নেতার হয়ে এলাকায় অবস্থান করছিলেন।
১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের তখনকার সাধারণ স¤পাদক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ বাবর ও রাউজান কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) মজিবুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসব খুনের ঘটনার মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসে মেজর ইকবালের নাম।
১৯৯৩ সালে পূর্ব গুজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকতার হোসেনকে ব্রাশফায়ারে হত্যার প্রধান আসামিও করা হয় মেজর ইকবালকে। রাউজানে দুই ভাই টিটু ও মিঠুকে একসঙ্গে হত্যা, মুক্তিযোদ্ধা নিহার কান্তি বিশ্বাসকে হত্যা, ছাত্রলীগের জেলা নেতা ইকবাল ও জামিল এবং ফটিকছড়ির শ্যামল ও আমান নামের দুই ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যা মামলার আসামি ছিলেন ইকবাল।
সর্বশেষ ২০১০ সালে সাত বছর জেল খেটে তিনি জামিনে বের হন। এরপর দুবাই গিয়ে পলাতক থাকেন আরও ৭ বছর। কয়েক বছর আগেই তিনি এলাকায় ফিরেছেন। তখনই ভয়ংকর এই সন্ত্রাসীর দেশে ফেরার কারণ অনুসন্ধানে ছিলেন পুলিশ প্রশাসন। মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্যও।
পুলিশ জানায়, ফেরার পর থেকে মেজর ইকবাল প্রকাশ্য চলাফেরার কারণে সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত রাউজানে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ইকবালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের দাবি, বড় একটি ঘটনা ঘটানোর জন্য ইকবালকে দেশে আনা হয়েছে। আর তাকে আনার পেছনে রাউজানের এমপি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর হাত ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাউজানের একজন বাসিন্দা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসে মেজর ইকবালকে একাধিকবার দেখা গেছে। আরেক ভয়ংকর সন্ত্রাসী আজিজও সেখানে প্রায়ই যাতায়াত করে। দুইজনের বিরুদ্ধেই গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে।
সে সময় রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসে গিয়েছিল র্যাবের একটি দল। ধারণা করছি, তাদেরকে ধরতে সেখানে গিয়েছিল। ওই সময়ে বিয়ে করেন বিএনপির এক শীর্ষ নেতার বোনকে। ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি গ্রেফতার হয়েছিলেন মেজর ইকবাল। সে সময় হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে মেজর ইকবালের বিরুদ্ধে ২২টি মামলা ছিল।
বন্দিজীবনে নতুন করে আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে মেজর ইকবালের। বন্দি থাকাকালীন কারাগারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন তিনি। এ কারণে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে তাকে বেশ কয়েকবার কুমিল্লা ও সিলেট কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
এদিকে একে একে সব মামলায় জামিন পেলেও তিনি দীর্ঘদিন স্বেচ্ছায় কারাগারে ছিলেন। ২০১০ সালের ৩১ মার্চ আদালত থেকে হাজিরা পরোয়ানা প্রত্যাহার হলে একই বছরের ২ এপ্রিল তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। ওই সময় কারাফটক থেকে ইকবালকে ফের হেফাজতে নিতে চেয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি বাহিনীর সদস্যরা।
তবে একজন জনপ্রতিনিধি নিজের গাড়িতে উঠিয়ে ইকবালকে সেখান থেকে নিয়ে আসেন। সে যাত্রায় বেঁচে যাওয়ার পর দুবাই পাড়ি জমান তিনি। বিগত জীবনে অনেক দুঃসময় পার করে আসতে হয়েছে মেজর ইকবালকে। হত্যার শিকার হতে হয় তার ভাই ইস্কান্দরকে। ১৯৯৯ সালের দিকে হালিশহরের একটি বাসা থেকে তার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ।
এরপর ইস্কান্দরের দুই মেয়ের লাশ উদ্ধার হয় পুকুর থেকে। ভাইয়ের এ অবস্থা দেখে প্রতিশোধ পরায়ণ, হিংস্র হয়ে উঠেন মেজর ইকবাল। একদিন মোটরসাইকেল নিয়ে চলার পথে থামিয়ে ইকবালকে ছুরিকাঘাত করে প্রতিপক্ষ কুখ্যাত সন্ত্রাসী বিধান বড়ুয়ার অনুগতরা। এতে পেটের বড় অংশ কেটে যায়। এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার পেটে মেজর মানে বড় অপারেশন হয়। সেই থেকে অপরাধ জগতে তার নাম হয়ে যায়- মেজর ইকবাল!











































