
কর্ণফুলী নদি থেকে অবাধে বালু তোলার প্রতিবাদ করে এবার প্রতিপক্ষের গুলিতে প্রাণ হারাল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়ন শ্রমিকদলের নেতা আবদুল মান্নান (৪২)।
বৃহ¯পতিবার (১৩ নভেম্বর) দিনগত রাত ১১টায় উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের মধ্যম সরফভাটা গ্রাম থেকে তার লাশ উদ্ধার করে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ।
নিহত আবদুল মান্নান (৪২) সরফভাটা ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। তার বাড়ি ওই ইউনিয়নে হলেও পরিবার নিয়ে রাঙামাটির চন্দ্রঘোনা এলাকায় বসবাস করেন তিনি।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকালে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মান্নানের লাশ উদ্ধার করে।
তার শরীরে চারটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি বাম চোখের কাছে, বাম হাতে একটি এবং পেটের ডানপাশে দুটি গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। অন্ধকারে নির্জন সড়কে গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত অবস্থায় মান্নান পড়ে ছিল। পাশে একটি মোটর সাইকেল পড়ে ছিল।
ওসি বলেন, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলছেন, মান্নান চন্দ্রঘোনা থেকে নিজ বাড়িতে তেমন আসেন না। বৃহ¯পতিবার দিনগত রাতে তার একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবার কথা ছিল। সেখানে না গিয়ে কেন তিনি সরফভাটায় এলেন, সেটা পরিবারের সদস্যরাও জানেন না।
প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি, আবদুল মান্নান বিদেশে ছিলেন। সরকার পতনের পর দেশে ফিরে আসেন। মোটর সাইকেলটি তার নিজের। তবে তার মোবাইলটি পাওয়া যায়নি। তদন্তের পর জানা যাবে, কারা কেন তাকে খুন করেছে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে ওসি জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত বছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির একাংশের কতিপয় নেতা কর্ণফুলী নদি থেকে বালু উত্তোলনে জড়িয়ে পড়ে। যা আগে ফ্যাসিস্ট সরকারের স্থানীয় এমপি, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ তার ভাই খালেদ মাহমুদ এবং এরশাদ মাহমুদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তাদের হয়ে বিএনপির একাংশের কতিপয় নেতা এই বালু উত্তোলন করে পাচার করছে।
এ নিয়ে কর্ণফুলী নদি তীরবর্তি সরফভাটা, শিলক, কোদালা, চন্দ্রঘোনা ও মরিয়মনগর ইউনিয়নের লাখ লাখ মানুষ প্রতিবাদ করে আসছে। এ নিয়ে দলীয়ভাবেও বিএনপির উপর চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে নদী তীরবর্তি মানুষের। যার অংশ হিসেবে সরফভাটা ইউনিয়ন শ্রমিকদলের নেতা আবদুল মান্নানও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন।
গুলির ঘটনায় নিহতের আগে আবদুল মান্নান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে রাঙ্গুনিয়ার জনগণকে এই বালু তোলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান। যা ভাইরাল হয়। ধারণা করা হচ্ছে- এই প্রতিবাদের জেরে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত বিএনপি পরিচয়ে কতিপয় নেতা ও তার অনুসারিরা গুলি করে আবদুল মান্নানকে হত্যা করে। মান্নানের ভিডিও লাইভ দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।
এর আগে গত ২৭ অক্টোবর দিনগত রাত ১২টার দিকে কর্ণফুলী নদি থেকে বালু তোলার ভিডিও লাইভ করায় কামরুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক সাংবাদিককে লাঠি-সোটা ও কিল-ঘুষি মেরে গুরুতর আহত করার ঘটনা ঘটিয়েছে।
ওই সাংবাদিক বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় সাংবাদিক কামরুল ইসলাম থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশ এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বিষয়টি তদন্তে র্যাব ও পুলিশের উর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার পলায়নের পর রাঙ্গুনিয়া, রাউজান ও চট্টগ্রাম শহরে কর্নফুলী নদীর রাঙ্গুনিয়া অঞ্চল থেকে বালুর রাজনীতি চলছে। এই বালুকে ঘিরে রাঙ্গুনিয়ায় এ পর্যন্ত ৪ জন, রাউজানে ১৭ জন এবং চট্টগ্রাম শহরে ৪ জন প্রতিপক্ষের গুলিতে খুন হয়েছেন।
আবদুল মান্নানের ভাইরাল ভিডিও











































