
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন জাতীয় পার্টির একাংশের সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। রাজনৈতিক দল হিসেবে এনডিএফ‘র পক্ষ থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেন তিনি।
আবার একইদিনে জুলাই অভ্যুত্থানের একাধিক মামলার আসামি আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে স্বৈরাচারের দোসর উল্লেখ করে তাকে গ্রেফতারের জন্য বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) নগর পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেছেন জুলাইযোদ্ধা ছাত্রদল নেতা মো. ওমর ফারুক। তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ স¤পাদক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।
মো. ওমর ফারুক জানান, জাতীয় পার্টির নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে গ্রেফতারের জন্য তিনি নগর পুলিশ কমিশনার ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে আলাদা আবেদন করেছেন। এতে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বিরুদ্ধে জেলার হাটহাজারী থানায় দুটি এবং নগরীর কোতোয়ালি ও ডবলমুরিং থানায় দুটিসহ মোট চারটি মামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ওমর ফারুক জানান, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই তিনি নগরীর মুরাদপুরে ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও পরবর্তীতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হন। একইদিন হামলায় তার সহযোদ্ধা চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের নেতা ওয়াসিম আকরাম নিহত হন।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ এবং আহতদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। কিন্তু একাধিক মামলার আসামি হওয়ার পরও গণহত্যায় জড়িত আনিসুল ইসলাম মাহমুদের মতো চিহ্নিত স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রশাসন কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি। এখন দোসরেরা নির্বাচনের মাঠেও নেমে যাচ্ছেন। এতে আমরা জুলাই আন্দোলনকারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এরই মধ্যে অনেকে স্বৈরাচারের দোসর সন্ত্রাসীদের হামলায় হতাহত হয়েছেন। একজন জুলাইযোদ্ধা হিসেবে আমি এটা মেনে নিতে পারি না।
আনিসুলকে গ্রেফতারের দাবি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে যাবেন জানিয়ে ওমর ফারুক বলেন, আমার দাবি হচ্ছে, আগে গণহত্যাকারীদের দৃশ্যমান বিচার হতে হবে। তারপর তারা রাজনীতিতে থাকবেন বা নির্বাচন করতে পারবেন কী না সেটা তখনকার বিষয়। কিন্তু আগে বিচার হতে হবে।
ওমর ফারুক আরও জানান, গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সম্ভাব্য প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও নগরীর একাংশ) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে এ মনোনয়নপত্র নেওয়া হয়েছে। সেখানে তিনি রাজনৈতিক দল হিসেবে এনডিএফর নাম উল্লেখ করেছেন।
গত ৮ ডিসেম্বর জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মূলধারা থেকে বের হয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের জাতীয় পার্টি এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি-জেপির নেতৃত্বে ২০টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) নামের একটি জোটের আত্নপ্রকাশ হয়েছে।
মঙ্গলবার এনডিএফর পক্ষ থেকে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ১২২ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরই আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। এদিন রিটার্নিং কর্মকর্তা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয় মিলিয়ে মোট ৩১টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ হয়েছে।
সংগ্রহকারীদের মধ্যে বিএনপি, এনসিপি, ইসলামী ফ্রন্ট, জাসদ, জাতীয় পার্টি, ইনসানিয়াত বিপ্লবসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা রয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। একইভাবে ফোন রিসিভ করেননি চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন।
তবে জুলাইযোদ্ধা ওমর ফারুকের আবেদন করার বিষয়টি স্বীকার করে সিএমপির পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, বিপিএম বলেন, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
প্রসঙ্গত, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও নগরীর একাংশ) আসন থেকে কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মহাজোটের সংসদ সদস্য হিসেবে একবার তিনি পানিস¤পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।












































