Skip to content

শুক্রবার- ৬ জুন, ২০২৫

বান্দরবানের রাজ ধনেশ পাচার হচ্ছে ভারতে!

বান্দরবান পার্বত্য জেলার গহীন অরণ্যে বসবাসকারি বিরল প্রজাতির রাজ ধনেশ পাখি পাচার হচ্ছে ভারতে। রবিবার (২৮ মে) দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা সাতক্ষীরা বা অন্য পথে পাচারের সময় চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়া কলেজের সামনে থেকে দুটি রাজ ধনেশ পাখি উদ্ধার করে পুলিশ।

পাচার কাজে জড়িত এক ব্যক্তিকেও আটক করেছে পুলিশ। তার নাম মিজানুর রহমান (৪৭)। তার বাড়ি পাবনা জেলার বেড়া উপজেলায়। ভ্রাম্যমান আদালত তাকে চার মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করেছে। আর এটিসহ গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রামে রাজ ধনেশ পাখি জব্দের দুটি ঘটনা ঘটল। গত ২৫ মে অপর ঘটনায় বাঁশখালী থেকে দুই জোড়া ধনেশ পাখিসহ দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ সোমবার (২৯ মে) দুপুরে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে চোরা চালানের নতুন আইটেম এখন বিরল প্রজাতির রাজ ধনেশ পাখি। এগুলো বেশ এক্সপেনসিভ। এই রাজ ধনেশ নামের এক জোড়া পাখি চার থেকে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি হয়।

ফলে অর্থের লোভে বন্যপ্রাণী পাচার চক্রের অনেক সদস্য চট্টগ্রামে সক্রিয় রয়েছে। এ চক্রের সদস্য মিজানুর রহমান রবিবার দিবাগত রাতে দুটি রাজ ধনেশ পাখি পাচারের সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়া কলেজ গেইট এলাকায় শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস থেকে জব্দ করা হয়। সাথে মিজানুর রহমানকেও আটক করা হয়।

চন্দনাইশ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাছবাড়িয়া কলেজ গেটের সামনে রবিবার দিবাগত রাত প্রায় পৌনে ১২টায় অভিযান চালিয়ে দুটি বিরল রাজ ধনেশ পাখিসহ মিজানুর রহমান (৪৭) কে আটক করে পুলিশ। মিজানুর রহমানের বাড়ি পাবনা জেলার বেড়া উপজেলায়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিজান জানিয়েছে, পাখিগুলো বান্দরবানের আলীকদম থেকে সংগ্রহ করে ঢাকার গাজীপুরে আরেকজনের হস্তান্তরের দায়িত্ব ছিলো তার। এরপর সাতক্ষীরা হয়ে ভারতে পাচার করা হয় এসব পাখি। এরপর রবিবার রাতেই চন্দনাইশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিমরান মোহাম্মদ সায়েক তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বন্যপ্রাণী আইনে আটক মিজানুর রহমানকে চার মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন।

এর আগে গত ২৫ মে রাতে বাঁশখালীতে চারটি রাজ ধনেশসহ দুই পাচারকারিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর পাচারকারী ও উদ্ধারকৃত ধনেশ পাখি থানা হেফাজতে রাখা হয়। ২৬ মে সকালে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ এর ৩৪ ধারার অপরাধে ৬ মাসের জেল প্রদান করা হয়।

আটক ব্যক্তিরা হচ্ছেন মূল পাচারকারী বাগেরহাটের শরণখোলা এলাকার মৃত ফজলুল হকের পুত্র মিজানুর রহমান (৪২)। পাখি পরিবহনকারি অটোরিকশা চালক চকরিয়ার পানখালী এলাকার আবদুল মালেকের পুত্র মোহাম্মদ সেলিম (৫২)।

এ বিষয়ে বাঁশখালী থানার ওসি মো. কামাল উদ্দিন আটক ব্যক্তিদের দেয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ধনেশ পাখি গুলো বান্দরবনের লামা আলীকদম থেকে সংগ্রহ করেছে। চট্টগ্রাম শহরে হয়ে ভিন্ন পথে খুলনা সাতক্ষীরা হয়ে সীমান্ত পাড় করার কথা ছিল। উদ্ধারকৃত চারটি রাজ ধনেশ পাখির বাজার মূল্য ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে বলে জানায় ওসি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহদাত হোসেন শুভ বলেন, এক সময় বান্দরবান পার্বত্য জেলাসহ পুরো পার্বত্য এলাকায় ধনেশ পাখি দেখা যেতো। বর্তমানে উঁচু ও বড় গাছ কেটে ফেলার কারণে এই পাখির আবাস সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকটা বিলুপ্তির পথে।

সাম্প্রতিক সময়ে ধনেশ পাখি পাচারের ঘটনা স¤পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো শহরে ধনেশ পাখি পোষে এমন তথ্য আমার কাছে নেই। তবে ভারত ও থাইল্যান্ডে এই পাখির অন্য রকম কদর রয়েছে। কেন তাও ঠিক জানা নেই। তাই হয়তো কোনো চক্র বিরল প্রজাতির এই রাজ ধনেশ পাচারের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি ধনেশ পাচার রোধে পুলিশের ভুমিকার প্রশংসা করেন।

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page