Skip to content

শুক্রবার- ৬ জুন, ২০২৫

চট্টগ্রামে চালের বাজারে সিন্ডিকেটের লুটপাট

“ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই। চালের পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। তবু একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। মূলত সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থির করে তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। দামের এই ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে পাইকারি বাজারে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন”

চট্টগ্রামে এবার চালের বাজারে চলছে সিন্ডিকেটের লুটপাট। ফলে দিন দিন অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত। জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তারা জানান, পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ থাকার পরও কতিপয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অতি মুনাফার লোভে চালের বাজার অস্থির করে তুলছেন।

সম্প্রতি চালের দাম বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে চট্টগ্রামের চাক্তাই ও পাহাড়তলি বাজারে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে দেখা যায় অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কারসাজি করে ভোক্তাদের পকেটের টাকা লুট করছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যবসায়ী ছাড়াও অনেকে ট্রেড লাইসেন্স বা লাইসেন্স ছাড়া ধান-চাল মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। এ জন্য এক আড়তদারকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি আড়তদারকে সতর্ক করা হয়।

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা আরও বলেন, ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই। চালের পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। তবু একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। মূলত সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থির করে তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। দামের এই ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে পাইকারি বাজারে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং টিম জানায়, নির্বাচনের পর হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যায়। প্রতি বস্তা চাল পাইকারিতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আতপ চালের বস্তায় বেড়েছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

সে হিসেবে বুধবার পাহাড়তলি পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তা জিরাশাইল ৩৩০০ টাকা, পাইজাম ২৬৫০ টাকা, নূরজাহান ২৫০০ টাকা, মিনিকেট ২৭০০ টাকা, ভিয়েতনামের বেতি ২৫০০ টাকা ও দেশি বেতি ২৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে সেদ্ধ চালের মতো আতপ চালের মধ্যে কাটারি প্রতি বস্তায় ৪০০ টাকা বেড়ে ৩৬০০ টাকা, মিনিকেট ৩০০ টাকা বেড়ে তিন হাজার টাকা, নাজিরশাইল ২০০ টাকা বেড়ে ৩৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনিগুড়া চালের দামও বস্তায় ১০০০ টাকা বেড়ে সাত হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অথচ নির্বাচনের আগের দিনও পাইকারি বাজারে সেদ্ধ চালের বস্তা জিরাশাইল ৩১৫০ টাকা, পাইজাম ২৫০০ টাকা, নূরজাহান ২৩০০ টাকা, মিনিকেট ২৩৫০ টাকা, ভিয়েতনামের বেতি ২২৫০ টাকা ও দেশি বেতি ২৪০০ টাকায় বিক্রয় হয়েছিল।

চালের দাম বাড়ার বিষয়ে পাইকারি বিক্রেতারা জানান, চালের বাজার অস্থির করার ক্ষেত্রে চালকল মালিক (মিলার) ও আড়তদাররা বেশি দায়ী। মিলার ও আড়তদাররা বাজারে ধীরে ধীরে চাল ছাড়ছেন। ফলে চাহিদার চেয়ে জোগান কমে যায়। এতে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে। এ কারণে চালের দাম বাড়ছে।

পাহাড়তলি বাজার বণিক সমিতির সহসভাপতি জাফর আলম বলেন, সরকারের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল মজুত আছে। এছাড়া প্রতিটি চালকলেও মজুত অনেক। ফলে দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই। দাম বাড়ার জন্য প্রকৃত দায়ীদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, মিলার ও আড়তদাররা যাতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারেন সে ব্যাপারে নজর দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি চাল উৎপাদনশীল অঞ্চলগুলোতে চাল মজুদ এবং অনেক প্রতিষ্ঠানের বেনামে চাল মজুদের ব্যাপারও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যাবস্থা করা হবে। এছাড়াও সারাদেশে চালের কৃত্রিম সংকট মোকাবেলায় সমন্বয় সাধন চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি প্রেরণ করা হবে।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page