শুক্রবার- ১৪ মার্চ, ২০২৫

চমেক হাসপাতালে ভর্তি বেড়ে ৭৩, আশঙ্কাজনক ২

চমেক হাসপাতালে ভর্তি বেড়ে ৭৩, আশঙ্কাজনক ২
print news

ট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম দিনে পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের যৌথ হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি বেড়ে ৭৩ জনে দাড়িয়েছে। এর মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে।

চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. মোমিন উল্লাহ ভুইঁয়া রবিবার বিকেল ৫ টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে ৭৩ জনকে আহত অবস্থায় আনা হয়েছে। এদের কারো বুকে, কারো মাথায় কোপ। ১৬ জন গুলিবিদ্ধ। তাদের মধ্যে দু‘জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের অনেকের শরীরে বেধড়ক পেটানোর চিহ্ন রয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে কয়েজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন, মো. আলাউদ্দিন (২৬), সোহরাব হোসেন (২২), ফয়সাল (২৫), আশরাফুল (৩০), জাহাঙ্গীর (২৬), সৌরভ (২২), মনির (২২), চিশতী (২৮), তাহমিন (১৯), শান্ত ইসলাম (২২), মাঈনউদ্দিন (২৪), কাওছার হোসেন (২৪), মো. মারফ (২৭), মাহবুব হোসেন (২৪), এহসান উল্যাহ (২৮), মো. শাহীন (২৬), শাহীন (২৪), আদিল (২৫), শাকিব উদ্দিন (২৩), রিদোয়ান (২৪), সাকিব উদ্দিন (২৩), ফারুক (২০), জয়নাল আবেদীন (২২), সাজিদুল হক (২১) ও আইনজীবী এস এম আবু তাহের (২৬), মো. ইসমাইল (২৪)। এছাড়া ভর্তি অনেকেরই নাম জানা সম্ভব হয়নি।

এর মধ্যে মো. ইসমাইল নামে একজন বলেন, তার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশনে। চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় একটি দোকানের কর্মচারী তিনি। বাসা থেকে দোকানে আসার পথে তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি আন্দোলনে ছিলেন না।

হকার মার্কেটের ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, দোকানে যাওয়ার পথে একদল যুবক আমার ওপর হামলা করে। এ সময় তারা আমার মাথা কোপ মেরেছে। আমি কোনরকম আন্দোলনের পক্ষে জড়িত নই।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার সকাল ১০টার পর থেকে শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম মহানগরীর নিউমার্কেট মোড়ে জড়ো হয়ে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শুরুতে নিউমার্কেটের আশেপাশে পুলিশ ছিল না।

হঠাৎ করেই বেলা সাড়ে ১১টার পর পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ছোঁড়ে। সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেট চত্ত্বর থেকে আশেপাশে ছোটাছুটি করতে থাকে। আরেকদিকে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সরকারি সিটি কলেজের সামনে এসে শিক্ষার্থীদের ঘিরে হামলা চালাতে শুরু করে। এতে কেউ কেউ রাম দা ও লোহার রড দিয়ে শিক্ষার্থীদের মারতে থাকে। আবার কেউ কেউ ককটেল ছুড়ে মারে। কেউ কেউ এলোপাতাড়ি গুলি করে।

পুলিশও টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। কয়েক রাউন্ড গুলির আওয়াজও শোনা যায়। এসময় শিক্ষার্থীদের অনেকে গুলিবিদ্ধসহ রাম দা‘র কোপ ও লোহার রডের আঘাতে আহত হয়ে সড়কে লুটিয়ে পড়ে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেট সড়ক ছেড়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এরপরই সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা নিউমার্কেট চত্ত্বরে অবস্থান নেন। পরে পুলিশ সেখান থেকে সরে যায়। সংঘর্ষের পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া আন্দোলনকারীদের একটি অংশ লালদিঘীতে জমায়েত হয়। আরেক অংশ টাইগারপাস-স্টেশন রোড হয়ে লালখান বাজার ও ওয়াসার দিকে চলে যায়।

এ সময় লালখান বাজার মোড় ও কাজির দেউড়ী মোড়ে আগে থেকে অবস্থানে থাকা যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ফের দু‘দিক থেকে শিক্ষার্থীদের ঘিরে ফেলে। এতে পাশের ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড কোরের সেনা সদস্যরা শিক্ষার্থীদের রক্ষায় এগিয়ে আসেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, ওয়াসার মোড়ে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দেয় সেনাবাহিনী। সেনা সদস্যরা রাস্তায় অবস্থান নেন এবং হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীরাও সেনাবাহীনিকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দেন।

উপস্থিত এক সেনা সদস্য জানান, শিক্ষার্থীদের আর্মি ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তরের সামনে নিরাপত্তা বেস্টনিতে রেখেছিল সেনাবাহিনী। পরিস্থিতি সেইফ হওয়ার পর তাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, রবিবার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার পর দু‘পক্ষ কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করার সময় সেখানে উভয়পক্ষের মধ্যে কয়েকদফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। যে-কোনো প্রকার সংঘাত এড়ানোর জন্য নগর পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। রাষ্ট্রীয় স¤পত্তি ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় হুমকি দেখা দিলে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবে, এটাই স্বাভাবিক।

ঈশান/মখ/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page