
এবার দুদকের রাডারে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান। টাকাপাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার ও হাজার কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এমন সময়ে এই অভিযোগ উঠলো, যখন তিনি সরকারি সফরে বিদেশে। আবার এ নিয়ে প্রশ্নও উঠলো, বলা হচ্ছে অভিযোগের বিষয় জেনে তিনি না কি বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন?
দুদক জানায়, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) দপ্তরের চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অডিট প্রতিবেদনে প্রায় ১ হাজার ৩১৪ কোটি টাকার ৭২টি বড় ধরনের অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪টি অনিয়ম রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অনিয়মগুলো হয়েছে দরপত্র কারসাজি ও চুক্তি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার মাধ্যমে।
অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন নওশাদ আলী নিজেই এবং তার সঙ্গে সদস্য হিসেবে রয়েছেন উপসহকারী পরিচালক মো. ইমরান আকন।
দুদকের সহকারী পরিচালক (তদন্ত ও অনুসন্ধান-৫) মো. নওশাদ আলীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়েছে, অভিযোগ তদন্তের স্বার্থে বন্দর চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামানকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। নথিগুলোর মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং প্রকল্পসংক্রান্ত অনুমোদনপত্র, আর্থিক বরাদ্দপত্র, টেন্ডার ডকুমেন্ট, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি, দাখিলকৃত দরপত্র, দরপত্র উন্মুক্ত ও মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন, তুলনামূলক বিবরণী, কার্যাদেশ, চুক্তি, বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন, বিল পরিশোধ সংক্রান্ত বিল-ভাউচারসহ সংশ্লিষ্ট সকল রেকর্ডপত্র।
দুদকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, অভিযোগের সুষ্ঠু ও গভীর তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া চেয়ারম্যানের স্ত্রী আইরিন জামান ও দুই ছেলে মুহতাসিম ইয়াসার ও সারান ইয়াসারের পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মনিবন্ধনের সত্যায়িত কপিও চেয়েছে দুদক।
বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গড়ে ওঠা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয় রয়েছে। এই সিন্ডিকেট বন্দর কমকর্তাদের যোগসাজশে এখনও আগের মতোই বেপরোয়া। দরপত্রে কারসাজির মাধ্যমে এই সিন্ডিকেট পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিচ্ছে, সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দিচ্ছে এবং প্রকল্পের ব্যয় কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে সরকারকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
দেখা গেছে, লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল-২ প্রকল্পে দরপত্রে কারসাজি করে প্রায় ১০ কোটি টাকা বেশি খরচ দেখিয়ে কাজের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বন্দরের বিদ্যুৎ বিভাগে এমন কয়েকটি গুরুতর দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এই দুর্নীতি তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল। খুঁজে দেখছে কিভাবে একটি সিন্ডিকেট বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রের টাকা লুটে নিচ্ছে।
রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান গত বছরের ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। তিনি রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলের স্থলাভিষিক্ত হন। দুর্নীতি, জোরপূর্বক গুম এবং হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে সোহায়েল গত বছরের ২০ আগস্ট গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে কারাগারে আছেন।
চট্টগ্রাম বন্দরে যোগ দেওয়ার আগে বর্তমান বন্দর চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিইডব্লিউ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সেনা কল্যাণ সংস্থার ডিজিএমআইএস এবং কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের চিফ স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নৌবাহিনীর এই শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা বর্তমানে সরকারি সফরে বিদেশে রয়েছেন।