শনিবার- ১৫ মার্চ, ২০২৫

এলসি ছাড়াই জাপান থেকে গাড়ি আমদানি, সতর্ক চট্টগ্রাম কাস্টমস

print news

ডলার সংকটের কারণে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পারায় দেশের আমদানি পণ্য বাণিজ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। সে কারণে বাজারে পণ্যমূল্যও উর্ধ্বমুখি। যার খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের ক্রেতা সাধারণকে।

কিন্তু পক্ষান্তরে কোন রকম ঋণপত্র খোলা ছাড়াই সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বিলাস বহুল গাড়ি আমদানি করছে ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি জাপান থেকে এলসি ছাড়াই আমদানি করা ৪৫৮টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির চালান বহনকারী একটি জাহাজ ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করেছে।

মালয়েশিয়া স্টার নামে গাড়িবাহী ওই জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করার জন্য সংশ্লিষ্ট জাহাজের শিপিং অ্যাজেন্ট কর্তৃপক্ষ ইমপোর্ট জেনারেল ম্যানিফেস্ট (আইজিএম) দাখিল করেছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার মো. বদরুজ্জামান মুন্সী ২৫ ডিসেম্বর সোমবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, এবার জাপান থেকে ৪৫৮টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হচ্ছে। তবে গাড়ি চালানের বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। এর আগে যেহেতু এলসি খোলা ছাড়াই জাপান থেকে গাড়ি আমদানি হয়েছিল, সেহেতু এবার আমরা সতর্ক রয়েছি।

তিনি আরও বলেন, এলসি খোলার বিষয়টি শতভাগ যাচাই করা হবে। ঋণপত্র খোলা না থাকলে গাড়ি ছাড় দেওয়া হবে না। এবার এ গাড়ির চালান বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছেছে। শিপিং এজেন্ট আইজিএম দাখিল করেছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছি।

তিনি আরও বলেন, রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিরও বিশেষ নিয়ম রয়েছে। গাড়ির লাইফটাইম, ইঞ্জিনের মেয়াদ, তৈরির সময় সবকিছু সঠিক পদ্ধতি মেনে আমদানি হচ্ছে কি না সেটিও শতভাগ দেখা হবে। তবে এবার চালানটি মাত্র বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করেছে। গাড়িগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আসুক। এরপর সব বিষয় বিবেচনায় আনা হবে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের একটি সূত্র জানায়, এর আগেও এলসি খোলা ছাড়া জাপান থেকে গাড়ি এসেছিল। যা স¤পূর্ণ অবৈধ। এবারও ঋণপত্র (এলসি) খোলা ছাড়া গাড়ি আসছে। এমন খবরে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিশেষায়িত সফটওয়্যার অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের মাধ্যমে জাপান থেকে ৪৫৮টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হচ্ছে এমন খবর জানতে পেরেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। ফলে জাহাজের আইজিএম দাখিলের পর থেকেই কাস্টমস কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন। শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হবে এসব গাড়ির চালানে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইসিএল শিপিং লাইসেন্সের জাহাজ মালয়েশিয়া স্টারে করে আনা ৪৫৮টি গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরে ও মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে। এর মধ্যে প্রাডো, হ্যারিয়ার, প্রিমিও, এলিয়নসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ি রয়েছে। প্রচলিত নিয়মে আইজিএমে রপ্তানিকারক, আমদানিকারক এবং ব্যাংকের নাম থাকে।

২০২২ সালের নভেম্বরে এলসি খোলা ছাড়াই ৭৬৯টি গাড়ি জাপান থেকে আমদানি করা হয়েছিল। যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিদ্ধান্ত মতে, এসব গাড়ি জরিমানা দিয়ে খালাস করেছিল রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডা।

জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশি দুজন শীর্ষ রপ্তানিকারকসহ কয়েকজন রপ্তানিকারক এ দেশের গাড়ি ব্যবসায়ীদের কাছে এসব গাড়ি পাঠালেও ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলার প্রক্রিয়া স¤পন্ন হয়নি সে সময়। ডলার সংকটের ফলে এলসি সংকটে গাড়ির বহর নিয়ে আমদানিকারকরা সংকটে পড়েছেন।

তবে এক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে, এলসি না খুলেই আমদানি করা গাড়ির দাম পরিশোধ করা হয় হুন্ডির মাধ্যমে। গাড়ি আমদানিতে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ।

জাপান থেকে ৭৬৯টি গাড়ি আমদানির ওই চালান জাহাজীকরণের পর কিছু গাড়ির এলসি খোলা হয়েছিল। সেগুলো থেকে ৪ শতাংশ হারে জরিমানা আদায় করা হয়েছিল। বন্দরে পৌঁছানোর পর যেসব গাড়ির এলসি খোলা হয়েছিল, সেসব গাড়ির শুল্কায়নযোগ্য দামের ৬ শতাংশ হারে জরিমানা করা হয়েছিল।

প্রচলিত নীতি অনুযায়ী, কোনো কিছু আমদানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ব্যাংকে এলসি খোলার পরই রপ্তানিকারক সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে পণ্য জাহাজীকরণ করে। গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রেও একই নীতি প্রযোজ্য। কিন্তু সম্প্রতি প্রচলিত নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের কাছে জাপানের রপ্তানিকারকরা এলসি খোলা ছাড়া গাড়ি পাঠিয়ে দেন।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমদানি-রপ্তানিকারকরা পরিকল্পনা করে শিপিং অ্যাজেন্টকে ম্যানেজ করে গাড়ির বহর পাঠিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশে। কিন্তু সে সময় এলসি না খোলায় বেশ শোরগোল সৃষ্টি হয়েছিল। কাস্টমস হাউস ও সংশ্লিষ্টরা ধারণা করেছিল হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন করে এসব গাড়ির চালান বাংলাদেশে এসেছিল।

তবে এবারও সেই সময়ের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে এমন ধারণা করছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। ফলে বিশেষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষ।

আমদানি সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের মোটরযান সেক্টরের প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। কয়েক বছর ধরে নতুন গাড়ি আমদানির পরিমাণ বাড়লেও এক সময় রিকন্ডিশন্ড গাড়ি এনে দেশের চাহিদা মেটানো হতো। এখনো নতুন গাড়ির পাশাপাশি জাপান থেকে প্রচুর পরিমাণে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি করা হয়। এতে করে জাপানে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি রপ্তানিকারক এবং বাংলাদেশের আমদানিকারক উভয়ই বাংলাদেশি হওয়ায় তাদের মধ্যে বেশ সখ্য রয়েছে।

যদিও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের কিছু নীতিমালা এখানে উপেক্ষিত হয়। বিশেষ করে পর¯পরের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের কারণে উভয়পক্ষই কিছুটা বাড়তি সুবিধা ভোগ করে।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার সাধারণ স¤পাদক শহীদুল ইসলাম বলেন, এলসি খোলা ছাড়া গাড়ি আমদানি অন্যায়। নিয়ম হচ্ছে এলসি ছাড়া গাড়ির শিপমেন্ট হবেই না। এ ধরনের কাজ যদি কোনো আমদানিকারক করে থাকেন, সেটি হবে অন্যায়। এর জন্য সরকারে আইন রয়েছে। আইন মোতাবেক কাজ করবে সরকার। গতবছর এলসি না খুলতে পারার কারণে দেশে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। এবারও এলসি ছাড়া গাড়ি আমদানি হচ্ছে কি না আমার জানা নেই।

ঈশান/খম/সুপ

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page