শনিবার- ১৫ মার্চ, ২০২৫

চট্টগ্রামে বাস চাপায় নিহত রিকশাচালকের ৬ কন্যা বাকরুদ্ধ

চট্টগ্রামে বাস চাপায় নিহত রিকশাচালকের ৬ কন্যা বাকরুদ্ধ
print news

ট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দোহাজারীতে পূরবী পরিবহনের একটি বাস চাপায় নিহত হন রিকশাচালক রুহুল আমিন। তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী ও ছয় অবুঝ কন্যা। যারা এখন বাকরুদ্ধ। তারা এখন শুধু অন্ধকার দেখছেন দু‘চোখে। তাদের ভবিষ্যত কি এটাই এখন বুঝতে পারছে না কেউ।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) বিকেলে চোখের জল মুছতে মুছতে এমন কথাই জানালেন নিহত রুহুল আমিনের ছোট ভাই রুহুল কাদের। তিনি বললেন, ভাইয়ের কত স্বপ্ন ছিল মেয়েদের নিয়ে! তাদের মানুষের মতো মানুষ করে দেখাবে। এ লক্ষ্যে কয়েক বছর ধরে রিকশা চালিয়ে সংসারটা টেনে নিয়ে যাচ্ছিল।

প্রতিদিনের মতো বৃহ¯পতিবার সকালেও ভাড়ার জন্য বেরিয়েছিল, কিন্তু আর ফিরল না সে। ঘাতক বাসটা পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলল ওকে। এখন এই বাচ্চা মেয়েগুলোর কী হবে? কীভাবে ওরা বাঁচবে, পড়াশোনা করবে?

রুহুল কাদের বলেন, সামনে ঈদ। নতুন জামা-কাপড়ের স্বপ্নে বিভোর ছিল ছোট ছোট মেয়েগুলো। কিন্তু বাবা যে আর নেই! কে কিনে দেবে তাদের ঈদের জামা? রুহুল আমিনের মৃত্যুতে শুধু একটি পরিবার নয়, পুরো দোহাজারী যেন শোকস্তব্ধ। এ শোক, এ ক্ষতি কি পূরণ হওয়ার?

রুহুল কাদের আরও বলেন, একটি ছেলে সন্তানের আশায় বুক বেঁধেছিলেন রুহুল আমিন ও তার স্ত্রী। কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে একে একে কোল আলো করে আসে ছয় কন্যা। অভাব-অনটনের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, তবুও মেয়েদের মুখে হাসি ফোটাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন রুহুল।

ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে যা আয় হতো, তা দিয়েই চলতো সংসার, মেয়েদের লেখাপড়া। দোহাজারী পৌর সদরের জরাজীর্ণ, স্যাঁতসেঁতে দুই কামরার সেমিপাকা ঘরটিই ছিল তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই। আট সদস্যের পরিবারে গাদাগাদি করেই দিন কাটতো। রুহুল আমিনের স্বপ্ন ছিল, মেয়েরা লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে। কিন্তু ঘাতক বাস সেই স্বপ্নকে পিষে দিয়ে গেল চিরতরে।

রুহুল কাদের জানান, বড় মেয়ে উম্মে সুলতানা সবে পা রেখেছে কৈশোরে। গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছে সে। চোখে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন। দ্বিতীয় মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা রিপা দোহাজারী জামিজুরী গার্লস হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তৃতীয় মেয়ে আলিফা জামিজুরী মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণিতে আর চতুর্থ মেয়ে ওয়াকিয়া দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আড়াই বছরের শিশু মা ফাতেমা আর মাত্র ২৫ দিন বয়সী কোলের বোনটি এখনও জানে না, কী হারিয়েছে তারা। অবুঝ চোখে কেবলই শূন্যতা।

বাবার লাশ ঘিরে মেয়েদের বুকফাটা কান্না, মায়ের আর্তনাদ, প্রতিবেশীদের দীর্ঘশ্বাস সব মিলিয়ে দোহাজারীর বাতাস যেন ভার হয়ে উঠেছে। বড় বোন উম্মে সুলতানার কোলে মাথা রেখে অঝোরে কাঁদছে ২৫ দিনের শিশুটি। যেন বুঝে গেছে, পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থলটি হারিয়ে গেছে চিরতরে।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম স্মৃতিচারণ করে বলেন, রুহুল আমিন মানুষ হিসেবে খুবই ভালো ও সৎ ছিল। রাস্তায় কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেই রিকশায় তুলে নিত। ভাড়া নিয়ে কোনোদিন কারো সাথে জোর-জবরদস্তি করত না। এমনকি স্বজনদের কারো সাথে কোনরকম বিরোধ নেই তার।

এদিকে খবর পেয়ে রুহুল আমিনের পরিবারকে দেখতে ছুটে গেছেন চন্দনাইশের উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দোহাজারী পৌর প্রশাসক ডিপ্লোমেসি চাকমা। তিনি বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে রুহুল আমিনের পরিবারকে তাৎক্ষণিক কিছু আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে। এমনকি পাশে থাকার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।

তবে নিহত রুহুল আমিনের অসহায় পরিবারটির সব দুঃখ কি ঘুচবে? ছয় কন্যাকে মানুষ করার স্বপ্ন কি পূরণ হবে রুহুল আমিনের? এমন প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে এলাকাবাসীর।

এলাকাবাসীরা জানান, বৃহ¯পতিবার (১৩ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দোহাজারী সদরে পূরবী পরিবহণ নামে একটি বাসের চাপায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক ও দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও এক শিক্ষার্থী।

নিহতরা হলো-ওয়াকার উদ্দীন আদিল (১২), রিজভী আকতার (১৬) এবং রুহুল আমিন (৪৫)। এর মধ্যে আদিল ও রিজভী আপন ভাই-বোন। আদিল পাঠশালা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির ছাত্র এবং রিজভী ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী। তারা জামিরজুরি চেয়ারম্যান বাড়ির জসীমউদ্দীনের সন্তান। আর রহুল আমিন দুর্ঘটনাকবলিত ওই ব্যাটারি রিকশার চালক ছিলেন। তিনি একই এলাকার চান গাজীর বাড়ির মৃত আমানত উল্লাহর ছেলে। আহত আরেকজন হলেন মোছা. তুসিন আক্তার (১৬)। সে চান গাজীর বাড়ির আব্দুল্লাহর মেয়ে।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছেন।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page