
চট্টগ্রাম ওয়াসায় পদোন্নতি ও নতুন নিয়োগকে কেন্দ্র করে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে কর্মচারীদের মাঝে। তাদের দাবি, বিগত সরকারের সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় যারা নিয়োগ পেয়েছেন আজও গুরুত্বপূর্ণ সব পদ ও সিদ্ধান্তের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই।
কর্মচারীদের অভিযোগ, প্রতি দু‘বছর পরপর আয়োজন করা উচ্চতর সিলেকশন বোর্ড মিটিং এখন নিয়োগ-পদোন্নতির প্রধান ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। সেখানে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যাখ্যা দিচ্ছে না। অনেকটা গোপনেই সিলেকশন বোর্ডের মিটিং করে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ওয়াসার শ্রমিক-কর্মচারী সংগঠনগুলো নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা শ্রমজীবী ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা এমডির কাছে পদোন্নতির বিষয়ে দাবি জানিয়েছিলাম। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী যারা পদোন্নতি পাবে তাদের দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছি। দ্রুত পদোন্নতি স¤পন্ন করার কথা আমরা বলেছি। নিয়ম অনুযায়ী যদি সেটা স¤পন্ন করা না হয়, তাহলে তো কেউ মানবে না।
সাবেক এমডি ফজলুল্লাহর সময় ওয়াসায় নিয়োগ ও পদোন্নতিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ছিল। অনেকে আগে যোগদান করেও জুনিয়র অবস্থায় পড়ে আছেন। আবার কেউ কেউ পরে যোগদান করেও প্রভাব খাটিয়ে পদোন্নতি পেয়েছেন। এর ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিন ধরে সংস্থার ভেতরে বৈষম্য তৈরি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, অস্থায়ী কর্মচারীদের নিয়মিতকরণ বা পদোন্নতি বছরের পর বছর ঝুলে আছে। অথচ হঠাৎ করে আওয়ামীপন্থী কয়েকজন কর্মকর্তার পদোন্নতির প্রক্রিয়া গোপনে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মানা হচ্ছে না নিয়মনীতি।
জ্যেষ্ঠতা তালিকা না করে অস্বচ্ছভাবে পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পরে যোগদান করেও অনেককে আগে নিয়ে এসেছে। ওয়াসার সচিবালয় বিভাগ থেকে টাকার মাধ্যমে এসব করা হচ্ছে। যা সরকার পরিবর্তনের আগে হয়ে এসেছে। সরকার পরিবর্তনের পরও সংস্থাটির কার্যক্রম সেই পুরনো প্রশাসনের ছকে চলছে।
সূত্র বলছে, ২০১৫ সালের ২৯ এপৃল সহকারী অপারেটর (পা¤প) পদে মাস্টাররোল থেকে ৩১ জনকে নিয়মিত করা হয়। পরবর্তীতে ৯ জুলাই আরও ১৫ জনকে একই পদে নিয়মিত করা হয়। কিন্তু তাদের স্থায়ী পদের তালিকায় জ্যেষ্ঠতার ধারা ঠিক রাখা হয়নি। ফলে একই পদে পরবর্তীতে যোগদান করেও অনেকে সিনিয়র বনে গেছেন।
এমন অভিযোগ নিয়ে গত রবিবার চট্টগ্রাম ওয়াসা এমডির কাছে অভিযোগ করেছেন মুহাম্মদ ফজলুল কাদের, জোছনা আকতার, আহসান নাইম। তাদের মতে, ওয়াসা একটি জনসেবামুখী প্রতিষ্ঠান। এখানে রাজনৈতিক প্রভাব বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক নিয়োগ নয়, বরং অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। কিন্তু নানা অনিয়মে দেওয়া পদোন্নতি ও নিয়োগে ২৪ এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফজলুল কাদের বলেন, সহকারী পা¤প অপারেটর পদে ৩১ জনকে নিয়মিত করার চারমাস পর আরও ১৫ জনকে নিয়মিত করা হয়। কিন্তু তালিকায় জ্যেষ্ঠতা বজায় রাখা হয়নি। যোগদানের তারিখ অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু সেটা না করে আমাদের চারমাস পরে যোগদান করেও তাদের সিনিয়র করা হয়েছে। এমন বৈষম্য দূর করার জন্য আমরা এমডির কাছে আবেদন করেছি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে তৎকালীন সরকারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকৌশলী এ.কে.এম ফজলুল্লাহ এম.ডি হয়ে আসার পর থেকেই চট্টগ্রাম ওয়াসায় শুরু হয় যত অনিয়ম ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ। তার আমলে ছাত্রলীগ ছাড়া কোনো নিয়োগই হয়নি। তার ধারাবাহিকতা এখনো চলমান। তার গড়ে তোলা সিন্ডিকেট চট্টগ্রাম ওয়াসাকে এখনো জিম্মি করে রেখেছে।
নিজেদের পদপদবি ও আধিপত্য বিস্তার ধরে রাখার জন্য নতুন করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের নাম ও লোগো দিয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে ফেলেছে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক কমিটির দু-একজন নেতা তাতে সমর্থনও দিচ্ছে। বিগত সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তারাই নতুন করে জাতীয় নির্বাচনের আগেই উচ্চতর সিলেকশন বোর্ড মিটিং করে নিজেদের চেয়ার পাকাপোক্ত এবং বড় ধরনের নিয়োগ বাণিজ্য করার প্রায় সব প্রক্রিয়া স¤পূর্ণ করে ফেলেছে।
কর্মচারীরা বিভিন্ন ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করলেও চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছে না। কর্মচারীদের অভিযোগ, কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কর্মচারীদের পদোন্নতি ও নিয়মিতকরণ না করে বর্তমান প্রশাসন তাড়াতাড়ি আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও নতুন জনবল নিয়োগের পাঁয়তারা করছে।
কর্মচারীদের প্রাণের দাবি হলো আগে কর্মচারীদের পদোন্নতি ও অস্থায়ী কর্মচারীদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে স্থায়ীকরণ করা। এরপর নতুন করে জনবল নিয়োগ করা হোক। কিন্তু ওয়াসা কর্তৃপক্ষ তা আমলেই নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি মনোয়ারা বেগমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।











































