সোমবার- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫

চট্টগ্রাম ক্লাবে সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদের মৃত্যু

চট্টগ্রাম ক্লাবে সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদের মৃত্যু

ট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউজের একটি কক্ষে সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল এম হারুন অর রশীদের (৭৫) মত্যু হয়েছে। (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন)।

সোমবার (৪ আগস্ট) দুপুরে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও চট্টগ্রাম ক্লাব কর্তৃপক্ষের ধারণা, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি রাতেই মারা গেছেন।

চট্টগ্রাম ক্লাবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন জানান, সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদ রোববার বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসেন। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। তবে বিকেল ৪টায় তিনি চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউজের একটি কক্ষে ওঠেন। ঘণ্টাখানেক পর তিনি ক্লাব থেকে বেরিয়ে রাত পৌনে ১১টায় ফেরেন।

কক্ষে ঢোকার আগে তিনি ডেস্কে গিয়ে ব্রেকফাস্টের সময় জেনে নেন। কিন্তু সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত দরজা না খোলায় ক্লাবের পক্ষ থেকে উদ্বেগ দেখা দেয়। পরে কক্ষের পেছনের জানালা দিয়ে দেখা যায়, বিছানার ওপর তিনি নিথর অবস্থায় পড়ে আছেন।

আরও পড়ুন :  নির্বাচন কমিশন প্রতীকের সংখ্যা বাড়াতে-কমাতে পারে : সিইসি

খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে কক্ষের দরজা খুলে তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) একটি চিকিৎসক দল ক্লাবে এসে তার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা জানতে পেরেছি সাবেক সেনাপ্রধান রোববার রাতে কোথাও দাওয়াত খেয়ে ক্লাবে ফিরে আসেন। সোমবার সকালে উনার একটা প্রোগ্রাম ছিল। সকাল ১০টায়ও কক্ষ থেকে বের না হওয়ার উনার আর্মি প্রটোকল টিমের সদস্যদের সন্দেহ হয়।

আরও পড়ুন :  সিএমপির ‘মানিলন্ডারিং’ তালিকায় ১৪৫ নেতা ও মন্ত্রী-এমপির নাম

পরে ক্লাবের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে কক্ষের পেছনে কাচের জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে উনারা দেখতে পান, তিনি মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। আমাদের ধারণা, তিনি স্ট্রোক করেছেন। আমরা ময়নাতদন্ত করার কথা বলেছি। এখন উনার পরিবার যা সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই হবে।

সাবেক সেনাপ্রধানের নিকটাত্নীয় এনাম আহমেদ বলেন, সোমবার উনার একটি মামলায় আদালতে হাজিরার কথা ছিল। সেজন্যই মূলত তিনি ঢাকা থেকে এসেছিলেন। চট্টগ্রাম ক্লাবের ভিআইপি রুমে একাই ছিলেন। চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে এটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে মনে করছেন।

সূত্র জানায়, সাবেক সেনাপ্রধান হারুন অর রশীদ ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে জন্মগ্রহণ করেন। পাকিস্তানের কাকুলস্থ মিলিটারি একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন।

আরও পড়ুন :  সিএমপির ‘মানিলন্ডারিং’ তালিকায় ১৪৫ নেতা ও মন্ত্রী-এমপির নাম

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এই রেজিমেন্টের বাঙালি সেনারা শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করেন। মুক্তিযুদ্ধের অবদানের জন্য তিনি বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন। ২০০০ সালের ২৪ ডিসেম্বর তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হন। একই দিন তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন।

২০০২ সালের ১৬ জুন জেনারেল হাসান মশহুদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের মাধ্যমে তিনি অবসরে যান। অবসরের পর তিনি কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এই সময়ে ডেসটিনির সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন তিনি। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলও খাটেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৭৫ বছর।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page