সোমবার- ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

জব্বারের বলীখেলায় এবারও চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার বাঘা শরীফ

জব্বারের বলীখেলায় এবারও চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার বাঘা শরীফ

ট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলার আসরে এবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার বাঘা শরীফ। নগরীর ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে কুমিল্লা আরেক বলী রাশেদকে পরাজিত করে চ্যা¤িপয়ন হন তিনি। গতবারের ১১৫তম আসরেও রাশেদকে হারিয়ে চ্যা¤িপয়ন হয়েছিলেন বাঘা শরীফ।

এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলেন বাঘা শরীফ। রাশেদকে গতবারের আসরের মতো এবারের ১১৬তম আসরেও রানার্স আপ ঘোষণা করা হয়। তারা দু‘জনই কুস্তির প্রশিক্ষণ নিয়েছেন জব্বারের বলীখেলার ১১৪তম আসরের চ্যা¤িপয়ন কুমিল্লার শাহজালাল বলীর কাছে।

আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সাধারণ স¤পাদক ও আবদুল জব্বার সওদাগরের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল শুক্রবার (২৫ এপৃল) রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, জব্বারের বলীখেলার এবারের আসর ছিল ১১৬তম। এতে অংশ নেন নিবন্ধিত ১২০ জন বলী। শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে মঞ্চে শুরু হয় বলীখেলার লড়াই। পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ আনুষ্ঠানিকভাবে বেলুন উড়িয়ে বলীখেলার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী আয়োজনে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। খেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

শওকত আনোয়ার বাদল জানান, এবারের বলীখেলায় সবচেয়ে বয়স্ক বলী ছিলেন কলিম উল্লাহ (৬৬)। আবার সবচেয়ে কম বয়সের বলী ছিল কিশোর ফয়সাল (১৬)। সবশেষে ফাইনাল রাউন্ডে বাঘা শরীফ ২৩ মিনিটে রাশেদ বলীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এর আগেরবার ১১৫তম আসরে ১১ মিনিট লড়াই কওে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন বাঘা শরীফ।

শতবর্ষী এই বলীখেলায় ১১৪তম আসরে চ্যা¤িপয়ন হয়েছিলেন কুমিল্লার মাংস বিক্রেতা শাহজালাল বলী। আর রানার্সআপ হয়েছিলেন চকরিয়ার তারিকুল ইসলাম (জীবন) বলী। এর আগে ২০২২ সালে শাহজালালকে পরাজিত করে চ্যা¤িপয়ন হন তারিকুল ইসলাম।

আর ২০১৯ সালে তারিকুলকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতেছিলেন শাহজালাল বলী। তারও আগের বছর ২০১৮ সালে শাহজালালকে হারিয়ে প্রথম শিরোপা জিতেছিলেন তারিকুল। কয়েক বছর ধরে এভাবে দু‘জনের মধ্যে শিরোপার লড়াই চলতে থাকে।

তবে জব্বারের বলীখেলায় এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ চ্যা¤িপয়ন কক্সবাজারের রামুর দিদারুল আলম ওরফে দিদার বলী। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি সর্বোচ্চ ১১ বার বিজয়ী হয়েছেন। এরপর থেকে দিদার বলী এ খেলা থেকে অবসরে আছেন। ১৯ বছর বয়সে জব্বারের খেলায় অংশ নিয়ে ৩৩ বছর বয়সে অবসরে যান এই বলী।

দর্শকদের উল্লাস
বলীখেলা মঞ্চে গড়ানোর দেড় ঘণ্টা আগে থেকেই মাঠে ভিড় করেন বলীরা। এ সময় মঞ্চের চারপাশ ঘিরে দেখা যায় দর্শকদের বাঁধভাঙা উল্লাস। বলীখেলা তো নয়, যেন পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চলের আবেগ অনুভূতির প্রাণের মেলা। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই ভিড় করেন এই বলীখেলা দেখতে। বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন এই বলীখেলায়।

নগরীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী শফিকুর রহমান। ছেলেকে নিয়ে এসেছেন জব্বারের বলীখেলা দেখতে। তিনি বলেন, প্রচন্ড গরমে অতিষ্ট, তারপরও ছেলের বায়না রাখতে বলীখেলা দেখাতে নিয়ে এসেছি। গরমে সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।

রুবেল এসেছেন বাঁশখালী থেকে। তিনি বলেন, বন্ধুদের সাথে বলীখেলা দেখতে এসেছি। আমরা সকালে রওনা দিয়েছি। সামনে বসে খেলা দেখবো। এখানে এসে দেখি আমাদের আগেও লোক এসে মাঠে ভিড় করছে। রোদ আর গরমে মাথা ঘুরাচ্ছে। এতো মানুষ নড়াচড়ার জায়গাও নাই।

নগরের পতেঙ্গা এলাকা থেকে এসেছেন সাকিব, তাসিন আর ইফতেখার। তবে ভিড়ের কারণে তারা মাঠে প্রবেশ করতে পারেননি। তাই লালদীঘি ময়দানের সীমানা প্রাচীরের উপর উঠে ঝুঁকি নিয়েই খেলা দেখছেন। ঝুঁকির বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে তারা বলেন, বছরে একবার বলীখেলা দেখার সুযোগ হয়। ঝুঁকি না নিলে তো দেখতেই পারবো না। রোদে গরমে কষ্ট হলেও খেলা দেখবো।

বলীখেলা ঘিরে বৈশাখী মেলা
প্রতিবছর বাংলা ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় জব্বারের বলীখেলা। বলীখেলাকে ঘিরে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা বসে লালদীঘির আশপাশের এলাকায়। এবার ২৪ এপৃল বৃহ¯পতিবার থেকে লালদীঘির মাঠ ও আশপাশের এলাকায় শুরু হয় বৈশাখী মেলা।

গরমের কারণে এবারের মেলায় ঝাড়ু ও তালপাতার হাতপাখা ছিল নারী-পুরুষের প্রথম পছন্দ। গৃহস্থালির বিভিন্ন সামগ্রী, শিশু-কিশোরদের খেলনা, গৃহসজ্জার জিনিস, তৈজসপত্র, ঝাড়ু, কুড়াল, আসবাবপত্র, গাছপালা সবই বিকিকিনি হচ্ছে এই মেলায়!

শুক্রবার (২৫ এপৃল) বিকেল সাড়ে ৩টায় নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকায় গৃহস্থালী সামগ্রী কেনার সময় রফিক ও নুরজাহান দম্পতি বলেন, গৃহস্থালী সামগ্রী মেলায় যেগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো সাধারণত চট্টগ্রামের হাট-বাজারে পাওয়া যায় না। তাই গরমের মধ্যেও প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে এসেছি। ঝাড়ু, মাটির থালাসহ তালপাতার হাতপাখা কিনেছি।

তারা বলেন, আগামীকাল শনিবার শেষ হবে প্রাণের এই মেলা। এই মেলা আরও কয়েকদিন থাকা উচিত। কারণ, অনেকে ব্যস্ততরা কারণে তিন দিনের মধ্যে মেলায় আসতে পারবে না। আগে এই মেলা ৭-৮দিন পর্যন্ত হত বলে জানান তারা।

আবদুল জব্বারের বলীখেলা উদ্যাপন কমিটির ১১৬তম আসরের আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান জানান, ১৯০৯ সালে বকশিরহাটের বিশিষ্ট বণিক ও চট্টগ্রাম শহরের বদরপাতির বাসিন্দা আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে এই বলীখেলার প্রচলন করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর এই প্রতিযোগিতা ‘জব্বারের বলীখেলা’ নামে পরিচিতি পায়। সেই থেকে নিয়মিত বলীখেলার আসর বসলেও মাঝখানে দুই বছর (২০২০ এবং ২০২১) করোনার জন্য এবং তারও আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একবার বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়নি।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page