
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম ও সাবেক তিন এমপির প্রাডো ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি জাপানে ফেরত পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নিলাম ডেকেও বিক্রি না হওয়ায় গাড়িগুলো সরবরাহকারী দেশ জাপানে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গত বছরের ১৭ জুলাই শুল্কমুক্ত সুবিধা ব্যবহার করে মোংলা বন্দরে জাপান থেকে মোট চারটি প্রাডো ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি আনা হয়।
গাড়িগুলোর একটি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহীমের। অপর তিনটি গাড়ি নীলফামারী-৪ আসনের সাবেক এমপি সিদ্দিকুল আলম, নাজপুর-১ আসনের মুহাম্মদ জাকারিয়া ও সংরক্ষিত আসনের নাসিমা জামান ববি আমদানি করেন।
কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরদিনই রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর) শুল্কমুক্ত সুবিধাও বাতিল করে দেয়। বিলাসবহুল এসব গাড়ির শুল্ক প্রক…ত দামের অন্তত তিন থেকে চার গুণ বেশি। ফলে চার সাবেক এমপিসহ অন্য কেউ গাড়িগুলো আর নিতে নিতে চাননি।
এদিকে নিয়মানুযায় মোংলা কাস্টম হাউস গত বছরের ২৫ নভেম্বর গাড়িগুলো নিলামে তুললেও অত্যাধিক দামের কারনে ক্রেতাদের কাছ থেকে সাড়া পায়নি। ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এরপরই গাড়িগুলো জাপানে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরই গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মংলা বন্দর থেকে জেনারেল ইবরাহীম ও সাবেক তিন এমপির প্রাডো ল্যান্ড ক্রুজার জাপানে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এদিকে নিলামে অংশগ্রহণকারী বিডাররা শর্ত পূরণ না করায় সাবেক এমপির ২৪টি বিলাসবহুল গাড়িসহ ৪৪টি গাড়ি নিলামে বিক্রির নিলাম কার্যক্রম ¯’গিত রাখা হয়েছে। প্রথম নিলামে অংশ নিয়ে গাড়ি কিনতে হলে রিজার্ভ ভ্যালুর ৬০ শতাংশ বা তার বেশি সর্বো”চ দরদাতা হতে হবে, এমন শর্ত আরোপ করা হয়েছিল।
এ হিসেবে প্রতিটি গাড়ি কিনতে ন্যুনতম ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা দর দিতে হবে। ২৫ শতাংশ করসহ এই গাড়ির সর্বনিম্ন দাম পড়বে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আমদানি ব্যয় ও শুল্ক মিলিয়ে গাড়িগুলোর সংরক্ষিত দর নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
অথচ ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার দুপুর ২টায় চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্ত…পক্ষ তাদের অকশন শেডে নিলাম বাক্স খুলে অংশগ্রহণকারীদের প্রস্তাবিত দর যাচাই-বাছাই করে দেখতে পায়, ৪৪টি গাড়ির মধ্যে রিজার্ভ ভ্যালুর ৬০ শতাংশ কাভার করেছে এমন গাড়ি মাত্র ১৪ থেকে ১৫টি।
এমপিদের নয়টি গাড়ি নিলামে কেনার জন্য কেউ আগ্রহই দেখাননি। বাকি ১৫টি গাড়ি কেনার আগ্রহ জানিয়ে যারা নিলামে অংশ নেন তাদের প্রস্তাবিত দর রিজার্ভ ভ্যালুর ৬০ শতাংশের শর্ত পূরণ করেনি। ফলে নিলাম কার্যক্রম আপাতত ঝুলে গেছে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় লাগবে।
কাস্টমস সূত্র জানায়, গত ২৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সাবেক ২৪ এমপির ২৪টিসহ মোট ৪৪টি গাড়ি নিলামে বিক্রির ঘোষণা দেয় কাস্টম কর্তৃপক্ষ। ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে এবং ঢাকা-চট্টগ্রামে সরাসরি বাক্সে নিলামের প্রস্তাবিত দরপত্র গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গাড়িগুলো নিলামে অংশগ্রহণকারীদের জন্য সরাসরি প্রদর্শনের ব্যব¯’া করা হয়। এরপর সোমবার নিলামে অংশগ্রহণকারীদের প্রস্তাবিত দর উন্মুক্ত করা হয়।
নিলামে তোলা ৪৪টি গাড়ির মধ্যে ৩৫টি গাড়ির বিপরীতে ১৪৩টি আবেদন ও দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। এর মধ্যে সাবেক এমপিদের ২৪টি গাড়ির মধ্যে নয়টির জন্য কোনো আবেদন ও দরপ্রস্তাব জমা পড়েনি। বাকি ৩৫টি গাড়ির মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেনের আমদানি করা গাড়িটির দর উঠেছে তিন কোটি ১০ লাখ টাকা। এটিই সব গাড়ির মধ্যে সর্বো”চ দর। শুল্কমুক্ত সুবিধার বাইরে আমদানি করা ২০টি গাড়ির দর উঠেছে দুই লাখ থেকে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকার মধ্যে।