মঙ্গলবার- ১৯ আগস্ট, ২০২৫

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি : সালাহউদ্দিন আহমেদ

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি : সালাহউদ্দিন আহমেদ

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি চেয়েছিল। এটা বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান, আইন ও বিধিবিধানের যেসব সংশোধনী প্রয়োজন হবে, সেগুলো আমরা করবো বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।

শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত শীর্ষ নেতাদের কবর জিয়ারত ও মাদ্রাসার মহাপরিচালকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

এর আগে সকালে মাদ্রাসা পরিদর্শন ও কবর জিয়ারতে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক স¤পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনসহ দলীয় নেতারা।

কবর জিয়ারত ও মতবিনিময় শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা আজ হুজুরদের কবর জিয়ারত করেছি এবং বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের আন্দোলনের নেতাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। আলোচনা হয়েছে আলোচিত জুলাই সনদ নিয়েও।

তিনি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছিল। জুলাই সনদের যেসব সুপারিশ ঐকমত্যের ভিত্তিতে সবাই গ্রহণ করেছে, সেগুলো উল্লেখ করে সনদ চূড়ান্ত হবে। এ সনদে যেসব সুপারিশ থাকবে সেগুলো দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবেন বলে সব রাজনৈতিক দল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ঐকমত্য কমিশন এ ব্যাপারে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি চেয়েছিল। আমরাও সেটা করেছি। এটা বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান, আইন ও বিধিবিধানের যেসব সংশোধনী প্রয়োজন হবে, সেগুলো আমরা করবো বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।

তিনি বলেন, জুলাই সনদের ৮২৬টি প্রস্তাবনার মধ্যে ৫১টি বাদে বাকি সবগুলোতেই আমরা একমত হয়েছি। ১১৫টি প্রস্তাবে আমাদের ভিন্নমত রয়েছে, যেগুলো আমরা উপস্থাপন করেছি। বাস্তবায়নের ব্যাপারে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছি।

নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সু¯পষ্ট ঘোষণা পাইনি। পেলে তারপর আমরা মতামত জানাবো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ সরালেও গণতন্ত্র এখনো পূর্ণতা পায়নি। শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে কাজ করেছেন, আমরাও সেই নীতির ধারাবাহিকতায় বিশ্বাসী। বিএনপিই সবচেয়ে বেশি মামলা, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তবু আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের পাশে থাকব।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার পথে কোনো বাধা দেখছি না। তবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না-ও হতে পারে, এমন কোনো দুশ্চিন্তায় বিএনপি নেই। আমরা অপেক্ষা করছি, সরকার এ ব্যাপারে শিগগিরই তাদের সু¯পষ্ট বক্তব্য নিয়ে আসবে এবং নির্বাচন কমিশনকে সে অনুযায়ী পরামর্শ দেবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ১৬ বছরের লড়াই এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের দাবির একটা অংশ পূরণ হয়েছে। বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। কিন্তু আরেকটি যেটা মূল দাবি ছিল, দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সেটা এখনো অস¤পূর্ণ আছে। কারণ, এখন রাষ্ট্রের কিছু সংস্কারের জন্য কাজ চলছে, একটা ঐকমত্য কমিশন হয়েছে। সেখানে আমাদের দলের প্রতিনিধি হিসেবে সালাহউদ্দিন আহমেদ কাজ করছেন। সেটাও চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। জুলাই সনদের যে ড্রাফট, সেখানে আমরা আমাদের মতামত দিয়েছি। আশা করছি, শিগগিরই সেটা প্রকাশ হবে। ফলে নির্বাচন নিয়ে আর কোনো বাধা আছে বলে আমরা মনে করি না। আমরা আশা করি, নির্বাচনের বিষয়ে শিগগিরই সরকারের পক্ষ থেকে একটি দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।

নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ও জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যদি আমরা প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, একটি গণতান্ত্রিক সরকার যদি আমরা প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, তাহলে এত শহিদ, এত নিপীড়িত মানুষের যে আকাক্সক্ষা সেটা অস¤পূর্ণ থেকে যাবে। সেজন্য আমরা আশা করি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কার্যক্রমটা দ্রুততর হবে। নির্বাচন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সবকিছুই মানুষের জন্য, জনগণের কল্যাণের জন্য।

হাটহাজারী মাদরাসায় আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা যুক্ত ছিলেন, আমরা তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে যে মর্মান্তিক ঘটনা, যে হত্যাযজ্ঞ, তার শিকার যারা, হেফাজতে ইসলাম, তার মূল নেতৃত্ব এখানেই। যারা মূল নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, মওলানা আহমদ শফী সাহেব এবং মওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেব, তাদের কবর জিয়ারত করে আত্নার মাগফেরাত কামনা করেছি। এখন যারা দায়িত্বশীল আছেন এই মাদরাসার, তাদের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে তাদের যে অবদান সেটা আমরা স্বীকার করি।

তিনি বলেন, আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে বিএনপি সবার মতামত নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চায়। আমরা আজ মুরব্বিদের (হেফাজত নেতা) বললাম, শহিদ জিয়া সবাইকে নিয়ে কাজ করতেন। বেগম খালেদা জিয়াও সবাইকে নিয়ে কাজ করতেন, একা না, জোটবদ্ধভাবে। আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব আল্লাহতালা যদি আমাদের দেন, তাহলে আমাদেরও সবার পরামর্শের প্রয়োজন হবে, সবার সহযোগিতার প্রয়োজন হবে।

হাটহাজারী মাদরাসায় যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের বলেছি, আমরা আপনাদের দোয়া চাই, পরামর্শ চাই, সহযোগিতা চাই। হাজারো শহিদ, লাখো নিপীড়িত মানুষ, ২০১৩ সালে হেফাজতের যারা শহিদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাদের আকাক্সক্ষা যেন আমরা পূরণ করতে পারি। আর জনগণ যদি অন্য কাউকে তাদের কল্যাণের দায়িত্ব দেয়, সেখানে আমাদের দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের প্রতি পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, আপনারা জানেন, বিএনপির নেতৃত্বেই বিগত ১৬ বছর ধরে বিরোধী দলগুলো আন্দোলন চালিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি শহিদ, সবচেয়ে বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার, সবচেয়ে বেশি মামলা-হামলার শিকার হয়েছে বিএনপি। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি এ লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে গেছে।

বারবার বিএনপি প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিএনপি নেতৃত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের জন্য শহিদ জিয়া বিএনপি গঠন করেছিলেন। বারবার এই শূন্যতা তৈরি করা হচ্ছে এবং বারবার বিএনপিকেই এই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। বাকশালের পরেও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে বিএনপির হাত ধরে। এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের পরেও দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে বিএনপির হাত ধরে। এবারো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে বিএনপি।

এর আগে গত ২০ জুলাই চট্টগ্রামে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচিতে এসে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম হাটহাজারী মাদরাসায় যান।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page