
সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বেড়েছে দূর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানীও। যানবাহনের তুলনায় সড়কটি সরু ও বাঁকা হওয়ায় কিছু কিছু জায়গা দূর্ঘটনা প্রবণ হয়ে উঠেছে। ফলে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় দুর্ঘটনামুক্ত করার লক্ষ্যে সড়কটির অতি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে লাল কাপড়ের নিশানা উড়াতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যে সড়কটির অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৬টি বাঁক চিহ্নিত করে সতকবার্তা হিসেবে লাল কাপড়ের নিশানা উড়িয়ে দিয়েছে বিআরটিএ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সার্কেল, সড়ক বিভাগ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি টিম। মহাসড়কের অতি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকসমূহ পরিদর্শন কওে কর্মকর্তারা লাল কাপড়ের নিশানা উড়িয়ে দেন।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে এ তথ্য জানান বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মো. মাসুদ আলম। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে কয়েকটি দূর্ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে গত ঈদ উল ফিতরের দিন থেকে টানা তিন দিনে ভয়াবহ তিন দুর্ঘটনায় ১৫ জনের প্রাণহানী ঘটে।
এসব ঘটনার পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক প্রশস্তকরণের জোরালো দাবি তুলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। কর্মসূচিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি ছিল দুর্ঘটনা রোধে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে ৬ লেনে উন্নীত করা। আর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয় চার লেন।
মাসুদ আলম বলেন, সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এর মধ্যে সড়কটি অধিকতর নিরাপদ করতে উদ্যোগ নেই বিআরটিএ সড়ক বিভাগ। তারই অংশ হিসেবে সড়কটির ঝুঁকিপূর্ণ অংশ চিহ্নিত করণে পরিদর্শন কাজ করছে সড়ক বিভাগের উর্ধ্বতন ও হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা।
গত ২১ মে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পরিদর্শনকালে কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ৬টি বাঁক চিহ্নিত করে। যেখানে চালকরা যাতে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে গাড়ির গতি কমিয়ে নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল করতে পারে সেই জন্য তাৎক্ষণিকভাবে লাল নিশানা স্থাপন করা হয়েছে। একই সাথে বসানো হয়েছে গতিরোধকও।
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো হলো, যথাক্রমে লোহাগাড়া চুনতির জাঙ্গালিয়া বাঁক, লোহাগাড়া চুনতির হাজিরটেক বাঁক, লোহাগাড়া-চুনতির মিঠাইর দোকান সংলগ্ন বাঁক, চন্দনাইশের বাগিচার হাট বাঁক, পটিয়ার আজমুর হাট বাঁক ও পটিয়ার ফুলকলি থেকে গৈড়ালার টেক বাঁক।
বিআরটিএ কক্সবাজার সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) উথোয়াইনু চৌধুরী, বিআরটিএ চট্টমেট্রো সার্কেল-২ এর মোটরযান পরিদর্শক মো. রেজওয়ান শাহ, পটিয়া সড়ক বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান পারভেজ, কক্সবাজার সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাহাত আলমসহ পটিয়া ও দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা লাল নিশানা স্থাপনের সময় সমন্বয়কারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
লাল কাপড়ের নিশানা উড়ানো প্রশংসনীয় উল্লেখ করে সড়কের হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাস চালক মোবারক হোসেন বলেন, পর্যটন নগরীর যোগাযোগের একমাত্র সড়ক হওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে প্রতিদিন নতুন বাস-মাইক্রো চালক আসেন। হঠাৎ আসায় তারা বুঝতে পারে না, সড়কের কোথায় বিপদ ওঁৎপেতে আছে। ফলে এই সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। ঘটছে প্রাণহানী। তাই লাল কাপড়ের নিশানা থেকে তারা বিপদজনক বার্তা পাবে। এতে যানবাহন নিয়ন্ত্রিভাবে চালানোর সুযোগ পাবে। সড়কটি চার লেনে উন্নীত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রত্যেকটি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় এভাবে লাল কাপড়ের নিশানা উড়ানোর উপর জোর দেন তিনি।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া এখন চলমান। তবে এর মধ্যে সড়কটি দুর্ঘটনামূক্ত করতে সড়ক ও জনপদ বিভাগ, বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশ একযোগে কাজ করছে। সওজ বিভাগ সড়কটির বিপদজনক অংশ চিহ্নিত করে গতিরোধক স্থাপন করছে। যাতে চালকরা গতি কমিয়ে যানবাহন চালাতে পারে। এতে দূর্ঘটনা কমে আসতে শুরু করেছে।