শনিবার- ৩ মে, ২০২৫

দুপুরে জামিন সন্ধ্যায় স্থগিত, মুক্তি মিলছে না চিন্ময় দাসের

দুপুরে জামিন সন্ধ্যায় স্থগিত চিন্ময় দাসের জামিন

রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় সাবেক ইসকন নেতা ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন।

কিন্তু সেই জামিন আদেশ স্থগিত করে রায় দেন চেম্বার আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানি নিয়ে বুধবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হকের চেম্বার আদালত এ আদেশ দেন। ফলে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস আর কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক, আরশাদুর রউফ, আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ফরিদ উদ্দিন খান।

আইনজীবীরা জানান, বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় হাইকোর্ট চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন। তার জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের পর বিকেলে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হেলাল আমীন আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিন আবেদন স্থগিত চেয়ে আপিল করেন। ওই আবেদন শুনানি নিয়ে জামিন স্থগিতের এ আদেশ দেন চেম্বার আদালত।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, নিম্ন আদালতে জামিন না মিললেও উচ্চ আদালত জামিন দিয়েছেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে। ফলে কারামুক্তিতে বাধা ছিল না। সমস্যা কাগজপত্র নিয়ে। হাইকোর্ট থেকে অর্ডারটি (আদেশ) নিম্ন আদালতে যাবে। যা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌছতে সপ্তাহখানেক সময় লেগে যেতে পারে। এরপর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেতেন। জামিন স্থগিত করায় তিনি আর মুক্তি পাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, গত পাঁচ মাস আগে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি হন হিন্দু ধর্মীয় এই নেতা গত পরশু ওনার (চিন্ময়) মা এবং আমি কারাফটকে গিয়ে দেখা করেছিলাম। উনি মোটামুটি ভালো আছেন। তবে শরীরটা আগের চেয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় ৭ কেজি ওজন কমেছে।

আদালতের তথ্যমতে, গত বছরের ২৫ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে সনাতনী সম্প্রদায়ের একটি বড় সমাবেশ হয়। সমাবেশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপরে ইসকনের লগো সম্বলিত একটি পতাকা উড়ানো হয়। এর কয়েকদিন পর গত ৩১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়।

এ মামলায় আরও ১৮ জনকে আসামি করা হয়। একই বছরের ২২ নভেম্বর চিন্ময়ের নেতৃত্বে রংপুরে আরও একটি বড় সমাবেশ হয়। এরপর রাষ্ট্রদ্রোহের সেই মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের আদালত। সেদিনই চিন্ময় দাসের আইনজীবীরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন চেয়ে আবার জামিন আবেদন করেছিলেন।

তার জামিন ঘিরে আদালত চত্বরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় চিন্ময়ের ভক্তরা। হামলায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে একজন আইনজীবীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রায় দুই ডজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর ২ জানুয়ারি ওই মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ তার জামিন আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন।

এরপর হাইকোর্টে চিন্ময় দাসের পক্ষে জামিন আবেদন করেন সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য। পরে ৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কেন জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page