বুধবার- ১২ মার্চ, ২০২৫

দ্বিতীয় দিনে চমেকের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি

শিক্ষার্থীদের সংহতি, রোগীদের ভোগান্তি

দ্বিতীয় দিনে চমেকের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি
print news

দ্বিতীয় দিনে গড়াল সারাদেশের ইন্টার্ন (শিক্ষানবিশ) চিকিৎসকদের কর্মবিরতি। এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া অন্য কাউকে চিকিৎসকের স্বীকৃতি না দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে নামে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ।

পরিষদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ কর্মসূচি পালন করছেন বলে জানান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল আটটা থেকে হাসপাতালের সব ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন থেকে বিরতিতে রয়েছেন তারা।

সোমবারও (২৪ ফেব্রুয়ারি) দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। আবার ক্লাস বর্জন করে সংহতি জানিয়ে সোমবার সকালে এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও। আর এই কর্মসূচিতে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের।

হাসপাতালের ২৬ নং ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগী নাফিজা সুলতানা জানান, ডাক্তাররা আগে দিনে দু‘বার রোগী দেখতে আসতেন। রবিবার থেকে একবারের জন্যও রোগী দেখতে আসেননি কোন ডাক্তার। তারা নাকি হরতাল ডেকেছে। এ নিয়ে ভর্তি হওয়া সব রোগী চিকিৎসা ছাড়াই শুয়ে রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. তসলিম উদ্দিন বলেন, চমেক হাসপাতালে ১৮০ জন ইন্টার্ন ডাক্তার রয়েছে। তারা কাজে যোগ দেননি। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যহত হচ্ছে।

তবে হাসপাতালের ডাক্তার নার্সেদের বাড়তি ডিউটির পাশাপাশি স্থায়ী চিকিৎসকদের সঙ্গে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন বিভাগে উচ্চতর কোর্সে অধ্যয়নরত চিকিৎসকেরাও। এতে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবায় তেমন কোন প্রভাব পড়েনি।

কর্মবিরতি সম্পর্কে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ডা. আসমাউল হুসনা রিমা জানান, পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে হাইকোর্ট রায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯০তম বারের মত পেছানোর মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতকে নাট্যমঞ্চের রঙ্গশালায় পরিণত করা হয়েছে।

আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সারা দেশের সকল মেডিকেল কলেজের সঙ্গে একাত্নতা পোষণ করে পূর্ণাঙ্গ রায় ও ৫ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছে চমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও। তবে আন্দোলনের আওতামুক্ত রয়েছে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, অপারেশন সেবা ও বর্হিবিভাগ।

এদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্নতা জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সব বর্ষের শিক্ষার্থীরাও। সোমবার বর্জন করেছেন ক্লাস-পরীক্ষাও। ফলে কার্যত অচল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। বিষয়টি স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো জসিম উদ্দিনও। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসেনি। কিন্তু শিক্ষকরা সবাই ক্যা¤পাসে এসেছে। ক্লাসে ছাত্র না থাকায় শিক্ষকরাও অলস সময় কাটিয়েছে। ছাত্ররা না এলে কিভাবে ক্লাস চলবে।

ইন্টার্ন চিকিৎসক মোহাম্মদ সাকিব জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আন্দোলন চলছে। রবিবার থেকে চলছে কমপ্লিট শার্টডাউন। সোমবার চমেকের শিক্ষার্থীরাও যোগ দিয়েছেন। ক্লাস বর্জন করে এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্নতা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

চমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক আজমাইন রাহাত বলেন, সারাদেশেই ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। সেটার অংশ হিসেবে আমরাও রবিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছি। দুপুরে মানববন্ধন করে অধ্যক্ষ ও পরিচালক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা অনেক কষ্ট, মেধা ও শ্রমের বিনিময়ে চিকিৎসক হয়েছি। কোনো কোর্স করে নয়। অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে আমাদের। কিন্তু আমরা দেখছি একটি কোর্স করেই অনেকেই ডাক্তার হয়ে যাচ্ছেন। এতে আমাদের পেশাটাকে অসম্মান করা হচ্ছে। আমাদের প্রধান দাবি, এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া আর কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবে না।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে তারা এসব দাবি সরকারের কাছে জানিয়ে এলেও, কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবার দাবি মানা না হলে কর্মবিরতি চলমান রাখাসহ কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবি গুলো হচ্ছে-
এমবিবিএস/বিডিএস ব্যতীত কেউ ডাক্তার লিখতে পারবে না, বিএমডিসির উচ্চ আইনের ভিত্তিতে করা এই আইন দ্রুত কার্যকর করতে হবে ও বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন ব্যতীত এমবিবিএস/বিডিএস চিকিৎসকদের চিকিৎসা প্রদান নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ২০১০ সালের সরকারি ম্যাটস থেকে পাসকৃত ছাত্রদের বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

এই বিষয়ের চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ওটিসি ড্রাগ লিস্ট আপডেট করতে হবে। এমবিবিএস/বিডিএস ছাড়া কেউ ওটিসি লিস্টের বাইরে ড্রাগ প্রেসক্রাইব করতে পারবে না। রেজিস্ট্রার চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কর্মক্ষেত্রগুলো ওটিসি লিস্টের বাইরে কোনো চিকিৎসা করতে পারবে না।

স্বাস্থ্যখাতে বিনিযোগের সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে। ৫০ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে সকল শূন্য পদ পূরণ করতে হবে। অঞ্চলভিত্তিক স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করে পূর্বের মতো সম্মুখ স্তরের চিকিৎসকদের নিয়োগ দিতে হবে। প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্যখাতের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সেইসাথে স্বাস্থ্যখাতের বিসিএসর কার্যক্রম আরও দ্রুত করতে হবে।

সমস্ত মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল ও মাধ্যমিক সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজসমূহ বন্ধ করে দিতে হবে। ইতিমধ্যে পাস করা ম্যাটস শিক্ষার্থীদের স্যাকমো পদবি রেখে শুধুমাত্র মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। এবং চিকিৎসক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।

ঈশান/বেবি/মখ

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page