
সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলা নি®পত্তির পর একই অভিযোগে নতুন করে এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ফের আরেকটি মামলা করেছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালি উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম. হারুনুর রশীদের ছোট ভাই আলমগীর কবির। গত ৩ জুলাই মামলাটি দায়ের করেন তিনি।
একই আইনে গত ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রথম মামলাটি করেন ইউপি চেয়ারম্যান এম. হারুনুর রশীদ। ওই মামলায় এক নম্বর সাক্ষী ছিলেন পরবর্তি মামলার বাদী আলমগীর কবির। প্রথম মামলায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে সিআইডি। এরপর অভিযুক্ত সাংবাদিক মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিনসহ মোট তিনজনকে খালাস দিয়ে মামলা নি®পত্তি করেন আদালত।
ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান এম. হারুনুর রশীদের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়, বিবাদীরা ফেসবুকে ফেইক আইডি থেকে চেয়ারম্যান এম. হারুনুর রশীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এতে চেয়ারম্যানের সুনাম ক্ষুন্ন ও মানহানি হচ্ছে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দেন।
হারুনুর রশীদের দায়ের করা এই মামলায় ২০২২ সালের ১৮ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির চট্টগ্রাম ইউনিটের পরিদর্শক আদিল মাহমুদ। প্রতিবেদনে ১ নম্বর বিবাদী আবুল কাশেম ও ২ নম্বর বিবাদী মো. ইলিয়াছকে পেশায় জেলে এবং অক্ষরজ্ঞানহীন বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ৩ নম্বর বিবাদী মো. বেলাল উদ্দিন পেশায় একজন সাংবাদিক; পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জের ধরে চেয়ারম্যানের সাথে এ সাংবাদিকের বিরোধ সৃষ্টি হয় বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সিআইডির উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সাক্ষ্য-প্রমাণ ও আইটি পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনায় এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় বাদীর আনিত অভিযোগের বিষয়ে বিবাদীদের বিরুদ্ধে কোনও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তাই তাদেরকে মামলায় দায় থেকে অব্যাহতি দিতে আদালতের কাছে আবেদন জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।
ওই মামলা নি®পত্তি হওয়ার পর ২০২২ সালের ৩ জুলাই চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালে নতুন করে একটি মামলা দায়ের করেন চেয়ারম্যান এম. হারুনুর রশীদের ছোট ভাই মো. আলমগীর কবির।
এই মামলায় সাংবাদিক মো. বেলাল উদ্দিন ছাড়াও আরও দুইজনকে বিবাদী করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৪ জনকে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, একটি নিউজের বক্তব্য নেওয়ার জন্য জনৈক চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়েছিলাম। শুরুতে চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, আঞ্চলিক ভাষাত হতা হনা ওয়া। ফেসবুকে এ ধরণের স্ট্যাটাস দিয়ে মানহানি করা হয়েছে। এর আগে চেয়ারম্যান এম. হারুনুর রশীদের দায়ের করা মামলায়ও সাংবাদিক বেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উল্লেখ করা হয়।
একই অভিযোগে বাদী পরিবর্তন করে নতুন করে মামলার বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের ভাই আরও একটি মামলা করেছেন, সেটি জানতাম না। হয়তো তারা এতোদিন নোটিশ গোপন করেছিলেন। গত ১০ আগস্ট পিবিআই থেকে আমাকে ফোন করে নোটিশ পেয়েছি কিনা জিজ্ঞেস করা হয়। তখন আমি জানতে পারি, আমার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয়েছে।
চেয়ারম্যানের ভাই আলমগীর কবিরের করা মামলার বিবাদী পল্লী চিকিৎসক মো. সাগর বলেন, গত ইউপি নির্বাচনে আমরা দুইজন নৌকার মনোনীত প্রার্থী মুজিবুর রহমান তালুকদারের পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছি। যার কারণে আমরা চেয়ারম্যানের চক্ষুশূলে পরিণত হই। এভাবে কেউ চেয়ারম্যানের মতামতের বিরুদ্ধে গেলে ঠুকে দেওয়া হয় মামলা। একই কথা বলেন মামলাটির অপর বিবাদী মো. ইয়াছিন আরফাতও।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার বাদী আলমগীর কবির বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব কি করেছেন আমার জানা নেই। অভিযোগের বিষয়েও আমি কিছুই বলতে পারছি না। তবে আমি একটা মামলা করেছি, এটা ঠিক আছে। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন মামলায় কি রকম সাক্ষি ছিলাম, আমি সেটাও জানি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ স¤পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, একই বিষয়ে একবার মামলা হয়ে নি®পত্তি হয়ে গেলে রিভিশন, আপিল এসব করা যাবে, কিন্তু ওই বিষয়ে নতুন করে মামলা করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ভিকটিম হয়েছেন মনে করে প্রথমে ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। এরপর প্রাচীন তদন্ত সংস্থা সিআইডি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায়নি। এরপর একই অভিযোগে চেয়ারম্যানের ভাইয়ের মামলা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে হয়রানি করা।
এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলার কারণে রাষ্ট্রের বড় দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের মূল্যবান শ্রম ঘন্টা নষ্ট হচ্ছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাদের আছে। এই অপ্রয়োজনীয় কাজ করতে গেলে যে সময় যাবে, সেই সময়ে তারা হয়তো চাঞ্চল্যকর কোনো মামলার রহস্য উদঘাটন করে ফেলতে পারতেন।
নি®পত্তি হয়ে গেছে, এমন বিষয়ে নতুন করে মামলার বিষয়টি হয়তো আদালত জানেন না, স্মরণ নেই বলে তদন্তে দিয়েছেন। কিন্তু এখন এটা নিয়ে আদালতেরও ভাববার বিষয়। কারণ প্রথম মামলার সাক্ষী হচ্ছেন দ্বিতীয় মামলার বাদী। জেনেশুনেই তিনি দ্বিতীয় মামলাটি করেছেন হয়রানি করার জন্য। এভাবে হয়রানি করা তো খুবই দুঃখজনক। এভাবে অপব্যবহার হচ্ছে বলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বদনাম হ”ে বলে মত দেন আখতার কবির চৌধুরী।