বুধবার- ১২ মার্চ, ২০২৫

রেল কর্মকর্তা আনসার আলীর ধর্ষণের শিকার অস্থায়ী নারী কর্মচারী শিরীন!

রেল কর্মকর্তা আনসার আলীর ধর্ষণের শিকার অস্থায়ী নারী কর্মচারী শিরীন!
print news

বাংলাদেশ রেলওয়ের উপ-পরিচালক আনসার আলীর বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অবাধ মেলামেশা ও ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন শিরীন আক্তার নামে এক নারী। ইউটিউবে পোস্ট করা ৪০ মিনিটের এক ভিডিওবার্তায় তিনি এ অভিযোগ করেন। বিয়ে না করলে রেল ভবনের সামনে আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছেন ওই নারী।

শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ইউটিউবে এই ভিডিওবার্তা পোস্ট করেন শিরীন আক্তার। এর আগে এ ঘটনায় রেল উপদেষ্টা বরাবরে একটি অভিযোগও করেন তিনি। ৩১ বছর বয়সী শিরীন আক্তার রেলওয়ের একটি দপ্তরে অস্থায়ী কর্মচারী (টিএলআর) হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাসিন্দা। অন্যদিকে অভিযুক্ত রেল কর্মকর্তা মো. আনসার আলী ঢাকা রেলভবনে উপ-পরিচালক (টিসি) হিসেবে কর্মরত আছেন।

ভিডিওবার্তায় শিরীন বলেন, ফেসবুকে আনসার আলীর সঙ্গে আমার ফ্রেন্ডশিপ হয়। তখন আমি জানতাম না, তিনি একজন রেলওয়ের কর্মকর্তা। তিনিও জানতেন না আমি রেলওয়ে অস্থায়ী কর্মচারী। পরিচয় হওয়ার পরে জানতে পারলাম, তিনি রেলওয়ের কর্মকর্তা। তখন আমি তাকে স্যার বলে সম্বোধন করি। যখন তিনি জানতে পারলেন আমি তার দেশের লোক, এরপর দু‘জনই খুশি হলাম। বিভিন্ন সময় আমাদের চ্যাটিং হতো। তখন আমি তাকে এক পর্যায়ে জানাই, আমার একটি কন্যা সন্তান আছে, আমার সিচুয়েশন এই, আমি অনেক চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছি। এরপর তিনি আমাকে আশ্বাস দেন, আমি আপনাকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবো। উনার কথায় ভরসা পাই। এরপর উনার সঙ্গে আমার টাকার কন্ট্রাক্ট হয়, উনাকে আমি বললাম আমার এত টাকা আছে। উনি বললেন, ঠিক আছে। আমি বললাম, টাকার এমাউন্ট যদি বেশিও লাগে তাহলেও আমি রাজি আছি।

শিরীন বলেন, ‘উনাকে আমি বললাম, অনেকগুলো সার্কুলারে আমি আবেদন করেছি। এরপর উনি বললো, ফেসবুক তো সেইফ না, হ্যাক হয়ে যায়। উনি এরপর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেয়। আমি চাকরির বিষয়ে যতটুকু কথা বলার ততটুকু বলেছি। এরপর ফোনে প্রতিদিন কথা হতো। এভাবে আমাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয়। আমি কিন্তু তাকে জাস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে রেখেছিলেন। কারণ তিনিও জানিয়েছেন তার স্ত্রী আছে, আমিও জানিয়েছিলাম আমার একটা আট বছরের সন্তান আছে। এভাবে কথা বলতে বলতে, আমাদের মধ্যে একটা বন্ডিং সৃষ্টি হয়েছে। এরপর একদিন উনি বললেন, তার স্ত্রীর অনেক সমস্যা। ফিজিক্যাল অনেক প্রবলেম। তিনি সেটিসফাইড না ওয়াইফের কাছে।’

ধর্ষণের প্রথম ঘটনা রাজশাহীর ‘ওয়ে হোম’ হোটেলে :

শিরীন আক্তার বলেন, আপনি তো আমাকে ফোনে দেখেছেন, ফেসবুকে দেখেছেন। আমি মিডলক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে। উনি আমাকে অনেক রিকুয়েস্ট করে দেখা করার জন্য। এরপর ঢাকা যাওয়ার কথা বলে আমি উনার সঙ্গে দেখা করতে যায়। আমি পৌঁছে যায় রাজশাহী, উনি পৌঁছান পরে। তখন শীতকাল ছিল, তারিখ ছিল ১২/১২/২০২৪। দেখা করার পর তিনি বলেন, তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই। এরপর উনার সঙ্গে কথা বলে আমি চলে আসতে চাইলে তিনি বলেন, তোমাকে আমার একটু জানার দরকার আছে, তুমি কি আমাকে ট্রাস্ট করো না? তুমি আমার সঙ্গে ওয়ে হোম হোটেলে চলো। এখানে মানুষ আমাকে চিনে ফেলবে। এরপর তিনি আমাকে ফুঁসলিয়ে হোটেলে নিয়ে যান। তিনি আমাকে বলেন, হোটেলে তুমি একটা বেডে থাকবে, আমি একটা বেডে থাকবে। তখন আমি উনার সঙ্গে হোটেলে যাই।’

ansewer

তিনি বলেন, হোটেলে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। এর দুই-তিন ঘণ্টা পরে উনি আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন ওনার সঙ্গে আমার ধস্তাধস্তি হয়। তখন উনাকে আমি জিজ্ঞেস করি, আপনি আমার সঙ্গে এমন করছেন কেন? উনি বলেন, তোমাকে দেখে আমি পাগল হয়ে গেছি। এরপর তিনি আমাকে জোর করে ধর্ষণ করেন। এ কথা রেলওয়ের অনেকেরই জানা আছে। এরপর উনি চলে যান ঢাকা আর আমি চলে আসি বাসায়। উনাকে পরে জিজ্ঞেস করেছি, বিয়ে কখন করবেন? উনি বলেন, টেনশন করো না, তোমার সঙ্গে আমি আজীবন থাকবো। এরপর তিনি আমার বাসায় এসে রাত্রিযাপন করেন।

চট্টগ্রামের ফাইভস্টার হোটেলেও ধর্ষণ :

শিরীন আক্তারের ভাষ্য, আনসার আলী বলেন এসএ কর্পোরেশনের (রেলওয়ের আউটসোর্সিং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান) মালিক শাহ আলমের প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার বিষয়ে তোমাকে জব দেবো। এ জন্য চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি তিনি আমাকে  চট্টগ্রামের একটি ফাইভস্টার হোটেলে রাখেন। এ সময় তিনি বলেন, আমার দু‘জন ফ্রেন্ড আছে, তারা বিয়ের সাক্ষী হিসেবে থাকবে। সেখানেও তিনি আমাকে জোর করে ধর্ষণ করেন। পরদিন ভোরে মিজান ও জাকির নামে দু‘জনের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করে দেন। তাদের সঙ্গেও খারাপ মেয়ে ছিল। তারাও রেলওয়েতে চাকরি করেন।

শিরীন অভিযোগ করেন, আমাকে বিয়ে করার কথা থাকলেও তিনি ঢাকা চলে যায়। আমিও সৈয়দপুর চলে আসি। তখন আমি বুঝতে পারি প্রতারিত হয়েছি। এরপর আনসার আলী আমাকে ফেসবুকসহ সবকিছুতে ব্লক করে দেন। পরে আমি নিরুপায় হয়ে রেলওয়ে উপদেষ্টা ও সচিব মহোদয়ের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার সমস্যার কথা জানালে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটি ৫ কর্মদিবসে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও দেয়নি। আমাকে একজন কল করে আবারও জবানবন্দি দিতে বলেন। এরমধ্যে আমাকে একজন কল করে আনসার আলীর সঙ্গে মিটমাট করার প্রস্তাব দেন। রেলভবনের জাকির নামে একজন আমাকে কল করে বলেন, আনসার আলী খুব প্রভাবশালী। তিনি তোমাকে বিয়ে করবে না। তুমি আমার সঙ্গে সম্পর্ক করো। এরপর আনসার আলীসহ একাধিক ব্যক্তি কল করে টাকায় মিটমাট করতে বলেন। নইলে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেন। এবং আমাদের ঘরে প্রতিদিন লোক পাঠিয়ে সমঝোতার প্রস্তাব ও হুমকি দিতে থাকেন। আমি দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই।’

রেল ভবনের সামনে আত্মহত্যার হুমকি :

শিরীন আক্তার বলেন, ‘আমি ভিডিওতে সবকিছু তুলে ধরেছি। ভিডিও প্রচারের পর জাহিদ নামে আনসার আলীর খালাতো ভাই পরিচয়ে একজন আগামীকাল (রোববার) বসে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে। আমি বলেছি, যদি বিয়ের করার জন্য রাজি হয়, তাহলে বসব। অন্যথায় কোনো বৈঠক হবে না। আনসার আলী আমাকে বিয়ে না করলে রেলওয়ে ভবনে সবার সামনে আমি আত্মহত্যা করবো।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপ-পরিচালক (টিসি) মো. আনসার আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মেসেজ অপশনে বক্তব্য চেয়ে মেসেজ পাঠালেও তিনি কোনরকম সাড়া দেননি।

ঈশান/মখ/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page