সোমবার- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫

সাবেক এমপিদের ৫ ল্যান্ড ক্রুজার কিনতে চায় চবক

সাবেক এমপিদের ৫ ল্যান্ড ক্রুজার কিনতে চায় চবক

ওয়ামী লীগের সাবেক এমপিদের নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা অর্ধ শতাধিক গাড়ির মধ্যে পাঁচটি ল্যান্ড ক্রুজার মডেলের গাড়ি কিনতে চায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। কাস্টমসের নির্ধারিত রিজার্ভ ভ্যালু অনুযায়ী প্রতিটি গাড়ি ৯ কোটি ৬৭ লাখ ৩ হাজার ৮৯৯ টাকা দিয়েই কিনতে চায় সংস্থাটি।

গাড়ি কেনার অনুমোদন চেয়ে ইতোমধ্যে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন।

তিনি বলেন, বন্দরের কার শেডে গত সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে পড়ে থাকা সাবেক এমপিদের নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি কিনে নিয়ে ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে চবক। পাঁচটি গাড়ি কেনার অনুমতি চেয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে গত ৫ মার্চ চিঠি পাঠানো হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সই করা ওই চিঠিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের যানবাহন সংকটের তথ্য তুলে ধরে এসব গাড়ি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রতিটি গাড়ির নির্ধারিত রিজার্ভ ভ্যালু অনুযায়ী ৯ কোটি ৬৭ লাখ ৩ হাজার ৮৯৯ টাকা দিয়েই গাড়িগুলো কিনতে চাইছে চবক। রিজার্ভ ভ্যালু অনুযায়ী গাড়িগুলো কিনলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে।

আরও পড়ুন :  নির্বাচন কমিশন প্রতীকের সংখ্যা বাড়াতে-কমাতে পারে : সিইসি

চবক সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সরকার পতনের পর নিয়মানুযায়ী সাবেক এমপিদের ২৪টি ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি নিলামে তোলা হয়। প্রথম নিলামে এসব গাড়ির সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন দাম উঠেছে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। কাক্সিক্ষত দাম না পাওয়ায় একটি গাড়িও বিক্রি হয়নি। এখন দ্বিতীয় নিলামে নতুন করে আরও ৬টি যুক্ত করে মোট ৩০টি গাড়ি নিলামে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টমস।

জানতে চাইলে বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, সাবেক সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা গাড়িগুলোর মধ্যে পাঁচটি বন্দর কর্মকর্তাদের ব্যবহারে কেনার জন্য অনুমোদন চেয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে গত ৫ মাচ চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠির জবাব আসেনি। আমরা কাস্টমসের রিজার্ভ ভ্যালু অনুযায়ী এসব গাড়ি কিনতে চাইছি। অথচ প্রথম নিলামে একটি গাড়িরও রিজার্ভ ভ্যালুর অর্ধেক দাম উঠেনি।

আরও পড়ুন :  সিএমপির ‘মানিলন্ডারিং’ তালিকায় ১৪৫ নেতা ও মন্ত্রী-এমপির নাম

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা সাবেক এমপিদের ২৪টি গাড়িসহ মোট ৪৪টি গাড়ির নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হয় গত ২৭ জানুয়ারি। দরপত্র জমা কার্যক্রম চলে ১৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা পর্যন্ত। মাঝে গত ২ ও ৪ ফেব্রুয়ারি দুই দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত গাড়িগুলো দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন আগ্রহীরা।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দরপত্র বক্স খোলা হয়। নিলামে তোলা সাবেক এমপিদের ২৪ ল্যান্ড ক্রুজারের প্রতিটির মূল্য ধরা হয়েছিল ৯ কোটি ৬৭ লাখ তিন হাজার ৮৯৯ টাকা। নিলামে ২৪টি গাড়ি কিনতে দরপত্র জমা পড়েছিল ১৪টিতে। ১০টি গাড়ি কিনতে কেউ আগ্রহ দেখায়নি। এতে দেখা যায়, নিলামে সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল তিন কোটি ১০ লাখ টাকা এবং সর্বনিু দাম উঠে মাত্র এক লাখ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম নিলামে দরের ৬০ শতাংশ বা তার বেশি যিনি দর দেবেন তার কাছে বিক্রির সুযোগ আছে। এই হিসেবে ন্যূনতম পাঁচ কোটি ৮০ লাখ টাকা দর পড়লে বিক্রির সুযোগ ছিল।

আরও পড়ুন :  সিএমপির ‘মানিলন্ডারিং’ তালিকায় ১৪৫ নেতা ও মন্ত্রী-এমপির নাম

এ প্রসঙ্গে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোটার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ম অনুযায়ী আমদানি করা গাড়ি ৩০ দিনের মধ্যে ছাড় না নিলে নিলামে তোলার সুযোগ রয়েছে। সাবেক এমপিদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা গাড়িগুলো ছাড় নেওয়ার আগেই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংসদ বিলুপ্ত হয়েছে। এ কারণে গাড়িগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে যায়। সংসদ বিলুপ্ত হওয়ায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় ছাড় নেওয়ার সুযোগ ছিল না। বর্তমানে গাড়িগুলোর কোনও দাবিদার নেই। সরকার চাইলে বন্দরকে যেকোনোভাবে দিতে পারে। এখানে আইনগত কোনও জটিলতা সৃষ্টির সুযোগ নেই।

ঈশান/খম/মসু

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page