
চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে বৃহস্পতিবার (২৪ এপৃল) থেকে শুরু হচ্ছে তিনদিনের বৈশাখী মেলা। পরদিন শুক্রবার (২৫ এপৃল) বিকেলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলীখেলা। খেলা ও মেলার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
মঙ্গলবার (২২ এপৃল) এ তথ্য জানান আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সাধারণ স¤পাদক ও আবদুল জব্বার সওদাগরের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল।
তিনি বলেন, প্রতি বছরের মতো বাংলা বর্ষের ১২ বৈশাখ অর্থাৎ ২৫ এপৃল লালদীঘির মাঠে বলীখেলা হবে। এটা হবে বলীখেলার ১১৬তম আসর। বাঁশ ও বালি দিয়ে মাঠে বলীখেলার মঞ্চ (রিং) তৈরির কাজ চলছে। তবে বলীখেলার আগের দিন ২৪ এপৃল থেকে ২৬ এপৃল পর্যন্ত লালদীঘির মাঠ ঘিরে বসছে বৈশাখী মেলা।
তিনি বলেন, বুধবার (২৩ এপৃল) সকাল ১০টা থেকে বলীখেলায় অংশগ্রহণকারীদের নিবন্ধন শুরু হবে। খেলায় যারা অংশ নেবেন, তাদের জন্য এবার আমরা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছি। সার্বিক আয়োজনে সহযোগিতা দিচ্ছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
শওকত আনোয়ার বাদল বলেন, ‘প্রতি বছর এ সময়টাতে তাপপ্রবাহ থাকে। এবারও তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। আমরা সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা শরবত পানের বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। চিকিৎসকরাও বলছেন, যততত্র বিক্রি হওয়া শরবত যেন পান করা না হয়। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মেলায় বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হবে।
মেলা কমিটির তথ্য মোতাবেক, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি যুব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চট্টগ্রামের বক্সীরহাটের বিশিষ্ট বণিক ও চট্টগ্রাম শহরের বদরপাতির বাসিন্দা আবদুল জব্বার সওদাগর কুস্তির প্রবর্তন করেন। যা চট্টগ্রাম অঞ্চলে বলীখেলা নামে পরিচিত। ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা ১৩১৬ সনের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলীখেলার সূচনা করেন তিনি।
সূচনার ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর লালদীঘির মাঠে ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় বলীখেলা। বলীখেলার একদিন আগে-পরে তিনদিন ধরে লালদীঘির ময়দান ঘিরে আন্দরকিল্লা থেকে কোতোয়ালীর মোড় পর্যন্ত আশপাশের এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে বসে বৈশাখী মেলা।
ব্যবসায়ীরা এ মেলায় অস্থায়ী দোকান বসিয়ে গৃহস্থালি ও রান্নাঘরের বাসন-কোসন, মৃৎপাত্র, খেলনা, মিষ্টি, ঝাড়ু, পাটি, আসবাবপত্র, কাঠ, বাঁশ ও বেতের জিনিসপত্র, গাছের চারা ও মাছ ধরার জালসহ বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প বিক্রি করেন। ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছাড়াও এই মেলার ব্যবহারিক তাৎপর্য রয়েছে। চট্টগ্রামের মানুষ রান্নাঘর ও গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য এই মেলার অপেক্ষায় থাকেন। মেলায় ভালো বিক্রি হয় বলে সমান আগ্রহ থাকে শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর।
এদিকে জব্বারের বলীখেলা উপলক্ষে যানবাহন চলাচলের নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামী ২৪ এপৃল থেকে ২৬ এপৃল পর্যন্ত লালদীঘি অভিমুখী সব ধরনের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী ২৫ এপৃল নগরীর লালদীঘির পাড় মাঠে ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মেলায় দেশের দূর-দূরান্ত থেকে পণ্য বিক্রেতারা তাদের পণ্যদ্রব্যাদি নিয়ে আসবে এবং ক্রেতাসাধারণসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ লোকজনের সমাগম হবে। বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা চলাকালীন ক্রেতা-বিক্রেতাসহ আগত লোকজনের সমাগমের কারণে লালদীঘি মাঠ সংলগ্ন আন্দরকিল্লা মোড় (জামে মসজিদের সামনে), পুরনো টেলিগ্রাফ রোড, বোস ব্রাদার্স মোড় (পুলিশ প্লাজার সামনে), রাইফেল ক্লাব, কোতোয়ালি মোড় (সিডিএ গেট), আমানত শাহ মাজার রোডের মুখ এবং টেরিবাজার ফুলের দোকান (তিন রাস্তার মুখ) রোড ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন প্রদান করা হবে। ফলে উক্ত সময়ে লালদীঘি অভিমুখে সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক আমদানি-রপ্তানিসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন কোতোয়ালি মোড় হয়ে ফিরিঙ্গীবাজার মেরিন ড্রাইভ রোড ব্যবহার করে চাক্তাই ও রাজখালী হয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে যাতায়াত করবে। লালদীঘি মাঠে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা উপলক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈশাখী মেলা সুষ্ঠুভাবে স¤পন্ন করার লক্ষ্যে এই নির্দেশনা অনুসরণের জন্য যানবাহন চালক ও যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলাকে ঘিরে স্টল বিক্রি, দোকান বিক্রি, দখল, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়াসহ জনসাধারণের নির্বিঘ্ন চলাচলে আন্দরকিল্লা থেকে কোর্ট বিল্ডিং পর্যন্ত সড়কে স্টল না বাসানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি দক্ষিণ মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন।