মঙ্গলবার- ৬ মে, ২০২৫

জোবাইদা ও শর্মিলাকে নিয়ে ফিরছেন খালেদা জিয়া

প্রস্তুত ফিরোজা

জোবাইদা ও শর্মিলাকে নিয়ে ফিরছেন খালেদা জিয়া

ন্ডনে চার মাস চিকিৎসা শেষে পূত্রবধু ডা. জোবাইদা রহমান ও িসৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথিকে সাথে নিয়ে দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

সোমবার (৫ মে) লন্ডনের গ্রিনিচ সময় বিকেল ৩টা ৩০মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৩০ মিনিটে) কাতারের আমিরের দেওয়া বিশেষ বিমান ‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে’ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি।

মঙ্গলবার (৬ মে) সকাল ১১টার দিকে তিনি ঢাকায় পৌঁছাবেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার দুই পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি দেশে আসছেন। আর ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন তারেক রহমানের সহধর্মিণী জোবাইদা রহমান।

খালেদা জিয়াকে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে বিদায় জানান যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা-কর্মীরা। দলের প্রধানকে বিদায় জানাতে দুপুর থেকেই বিমানবন্দরে জড়ো হন তারা। এ সময় তারা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নাম ধরে নানা স্লোগান দেন। সুস্থ নেত্রীকে বিদায় জানাতে পেয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে।

এদিকে দলের চেয়ারপারসনের দেশে ফিরছেন- এই খবরে বিএনপি নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। সুস্থ নেত্রীকে বরণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই গাড়ি চালিয়ে মাকে বিমানবন্দরে নিয়ে যান। সোমবার লন্ডনের স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে বাসা থেকে বিমানবন্দরে উদ্দেশে রওয়ানা দেন। এ সময় গাড়ির সামনে সিটে ছিলেন খালেদা জিয়া। আর পেছনের সিটে বসেন দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান, সৈয়দা শর্মিলা রহমান ও নাতনি জাইমা রহমান।

মাকে দেশের পথে পাঠিয়ে দেওয়ার সময় ছেলের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেন বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। পাশে থাকা লোকজন সবাইকে হাসিখুশি দেখা যায়। মা তার সন্তানকে বিদায় বেলায় গালে আদর করে দেন। তারেক রহমানও মাকে বিদায় জানানোর মুহূর্তে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় ছেলের খেয়াল রাখতে তারেক রহমানের এক ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকেও অনুরোধ জানাতে দেখা যায় খালেদা জিয়াকে।

খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী জানান, আমরা ম্যাডামকে নিয়ে বিমানবন্দরে আছি। ফ্লাই করার অপেক্ষায় আছি। লন্ডন থেকে ঢাকার যাত্রা পথে দোহায় যাত্রাবিরতি আছে। সেখানে বিমানে তেল নেওয়া হবে। সবমিলিয়ে এক ঘণ্টার যাত্রা বিরতি আছে।

জানা গেছে, দুই পুত্রবধূ ছাড়াও সফরসঙ্গী হিসেবে আছেন তার মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ, খালেদা জিয়ার সহকারী মাসুদুর রহমান, মিসেস দিলারা মালিক, তার দুই গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম ও রুপা শিকদার। এ ছাড়াও চেয়ারপারসনের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার ও ডা. জাফর ইকবাল।

ঢাকায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি রাজকীয় বহরের বিশেষ বিমান দিয়েছিলেন। ওই বিশেষ বিমানে (বিশেষ ধরনের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) করে তিনি ৮ জানুয়ারি লন্ডনে যান। সেই বিশেষ বিমানেই আবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান এবং সৈয়দা শর্মিলা রহমানের জন্য গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ প্রস্তুত করা হয়েছে।

সোমবার (৫ মে) সরেজমিনে গুলশানের ৮০ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়িটির চারদিকে দেয়াল ঘেরা, সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের জন্য কক্ষ দেখা গেছে।

পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছে পুলিশ ও চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যরা। বাসার ভেতরের সব কক্ষগুলোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হয়েছে। সামনের সবুজ আঙিনায় ফুল গাছের টব দিয়ে সাজানো হয়েছে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, খালেদা জিয়ার বাসা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসা, বাসার আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সাজসজ্জা কোনো কিছুই বাকি নেই। খালেদা জিয়ার স্বজনরা সবকিছু তদারকি করেছেন।

এদিকে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা নিয়েছেন। তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, রাস্তার ওপর যেন কেউ না দাঁড়ায়। যারা অভ্যর্থনা জানাবেন তারা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে যেন খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান। দলের নেতাকর্মীরা যেন জাতীয় ও বিএনপি পতাকা হাতে নিয়ে দলের চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানান।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুলিশ কর্তৃপক্ষকেও রাস্তায় কাউকে দাঁড়াতে না দেওয়ার অনুরোধ জানান। এছাড়া, তিনি বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে যেতে যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ জানান।

গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তার ছেলে তারেক রহমানের বাসায় লন্ডনের ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন আছেন। প্রায় ৮০ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তবে লন্ডন ক্লিনিকে ঝুঁকির কথা চিন্তা করে লিভার প্রতিস্থাপন করেননি চিকিৎসকরা।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show