
পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। রাতের আঁধারে চালানো এই হামলায় কমপক্ষে ৭০ জন নিহত হয়েছেন। এমনই দাবি করেছে ভারত। ভারতের দাবি, নিহতদের সবাই সন্ত্রাসী।
একইভাবে পাকিস্তানি পাল্টা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩২ জন। নিহতদের সবাই ভারতের পুঞ্চ জেলায় বসবাসকারী সাধারণ নাগরিক।
এই অঞ্চলটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলওসি) কাছেই অবস্থিত। এর আগে পাকিস্তানি হামলায় ভারতে ৭ জন নিহতের খবর জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম গুলো।
বুধবার (৭ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, বুধবার ভোরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মিরে “৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে” ২৪টি সুনির্দিষ্ট মিসাইল হামলা চালিয়েছে। এই অভিযানে লস্কর-ই-তইবা এবং জইশ-ই-মোহাম্মদের শক্ত ঘাঁটি মুরিদকে ও বাহাওয়ালপুরে হামলা করা হয়।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, এই হামলায় অন্তত ৭০ জন সন্ত্রাসী নিহত এবং আরও ৬০ জনের বেশি আহত হয়েছেন, যা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডে “বড় ধরনের ধাক্কা” দিয়েছে।
হামলাগুলো বুধবার রাত ১টা ৪৪ মিনিটে চালানো হয়। মূলত জম্মু-কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিলের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জবাবে এই হামলা চালানো হয়। সেই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালের নাগরিক।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, “পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মিরের যেসব ঘাঁটি থেকে ভারতের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা ও পরিচালনা করা হয়, সেগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে।”
বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়, “আমাদের এই অভিযান সুনির্দিষ্ট, সীমিত এবং উত্তেজনা বৃদ্ধির চেষ্টা নয়। কোনও পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। লক্ষ্য বাছাই ও হামলার পদ্ধতিতে ভারত যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে।”
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ভারত তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সন্ত্রাসী হামলার পেছনে থাকা “দায়ীদের জবাবদিহির আওতায়” আনছে। পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রয়ায় ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করছে।
এদিকে এক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার বরাতে বিবিসি জানাচ্ছে, পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে ভারতের চালানো বিমান হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারী গোলাবর্ষণ শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পুঞ্চ ও মেন্ধার অঞ্চলে গোলাবর্ষণ ছিল সবচেয়ে তীব্র। বহু বাড়িঘর, দোকান এবং অন্যান্য স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় এক সাংবাদিক বিবিসিকে জানায়, বুধবার রাতে টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি। কেউ ঘুমোতে পারেনি। অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যান। আমাদের স্থানীয় হাসপাতাল আহত মানুষে পরিপূর্ণ। পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ।
এই সহিংসতা এমন এক সময়ে ঘটল যখন দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। সীমান্তে নতুন করে সহিংসতা বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং অনেক এলাকা কার্যত জনশূন্য হয়ে পড়েছে।