রবিবার- ১১ মে, ২০২৫

৩৭ ডিগৃ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পুড়ছে চট্টগ্রাম

হাসপাতালে বেড়েছে হিটস্ট্রোক ও মাথাঘোরার রোগী, রাস্তায় কমে গেছে মানুষ চলাচল

৩৭ ডিগৃ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পুড়ছে চট্টগ্রাম

ট্টগ্রামে তাপমাত্রার পারদ উঠেছে ৩৭ ডিগৃ সেলসিয়াসের ঘরে। আর এতেই পুড়ছে মানুষের গা। গরম থেকে বাচতে খুঁজছে ছায়া। ফলে রাস্তায় কমে গেছে মানুষের আনাগোনা।

শনিবার (১০ মে) সকাল থেকেই চট্টগ্রাম মহানগরজুড়ে তীব্র গরমে কার্যত হাঁসফাঁস করছে জনজীবন। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে দেখা গেছে মাথায় কাপড় বা গামছা পেঁচিয়ে গরম থেকে নিজেকে রক্ষা করছে মানুষ।

তাদের অনেকের ভাষ্য, সকাল ১০টা থেকে রাস্তায় বের হলেই সুর্যের তেজ যেন মাথার ওপরে এক টুকরো আগুনের মতো লাগছে। বেলা গড়াতেই যেন ব্যস্ত নগরের মানুষ ছায়া খুঁজতে অনেকটা নিরাপদস্থলে চলে গেছে। ফলে নগরীর আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, নিউ মার্কেট বা বহদ্দারহাটে দুপুরের দিকে মানুষের চলাচল কমে আসে অনেকটাই।

পেটের দায়ে যারা ছুটছেন তাদের অনেকেই পানির বোতল হাতে রিকশা বা বাসের অপেক্ষায় দোকানের ছাদের নিচে ছায়ায় দাঁড়িয়ে একটুু শান্তি খোঁজার চেষ্টা করছেন। এ সময় নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে ফজলুর রহমান নামে এক রিকশাচালক বলেন, এই গরমে প্যাডেল মারা যায় না। গায়ে পানি ঢেলে বের হই, মনে হয় মিনিট খানেকেই আবার শুকায়। একবার ভাড়া মারার পর যেন রত-হাত আর চলে না। ঠিকমতো ভাড়া মারতে পারতেছি না দেখে ইনকামও কমে গেছে।

শুধু রিকশাচালক নয়, সূর্যের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ শ্রমিকসহ খোলা আকাশের নিচে কাজ করা নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। আগ্রাবাদে সাইফুল ইসলাম নামে এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, সিমেন্টের গরম মিশ্রণে কাজ করতে গিয়া মনে হয় শরীরই পুড়ে যাচ্ছে। কি আর করা উপায় তো নাই। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, গরম হোক আর যাই হোক কাজ না করলে ভাত জুটবে না।

এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হিটস্ট্রোক ও পানিশূন্যতায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত তিনদিন ধরে চট্টগ্রামে তীব্র গরম অনুভুত হচ্ছে। সেই থেকে প্রতিদিনই হিটস্ট্রোক, পানিশূন্যতা ও মাথা ঘোরার সমস্যা নিয়ে গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন রোগী হাসপাতালে আসছেন। যাদের মধ্যে নিম্নআয়ের মানুষ বা শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, শনিবার চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ উঠেছে ৩৭ ডিগৃ সেলসিয়াসের ঘরে। কিন্তু শরীরে গরম অনুভুত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের ৪১ ডিগৃর মতোই। আগামী কয়েকদিন এই গরম অব্যাহত থাকতে পারে। কিছু এলাকায় সামান্য বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে তাও মাত্র ৪ শতাংশ।

আবহাওয়াবিদদের মতে, পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা গরম বাতাস এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠায় বাতাসে আর্দ্রতা ও তাপপ্রবাহের অনুভূতি আরও তীব্র হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে, যা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে ১২ মে থেকে বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যা ১৩ মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

এই সময়ে চট্টগ্রামবাসীকে কয়েকদিন সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ কওে এ অবস্থায় সরাসরি সূর্যের আলো এড়িয়ে চলা, পর্যাপ্ত পানি পান করা, হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান এবং শিশু ও বৃদ্ধদের বিশেষ যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক প্রফেসর ডা. মো. আবু জাফর।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show

You cannot copy content of this page