বুধবার- ১৪ মে, ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমবার চট্টগ্রাম সফরে ড. ইউনূস

করবেন দ্বিতীয় কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমবার চট্টগ্রাম সফরে ড. ইউনূস

গামীকাল ১৪ মে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সফর করবেন। মূলত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার চট্টগ্রাম সফরে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর দ্বিতীয় রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

ওইদিন প্রধান উপদেষ্টার ব্যস্ত সূচির কারণে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে ডিজিটাল সুইচ টিপে কালুরঘাট রেল ও সড়ক সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এ উপলক্ষ্যে দুপুর ১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আড়াই ঘন্টার একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সুবক্তগীন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, পরিবেশের প্রতিকুলতার কারণে কালুরঘাট দ্বিতীয় সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন সার্কিট হাউজ থেকে করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভিত্তিপ্রস্তর ফলকে নামও দিতে চাচ্ছেন না প্রধান উপদেষ্টা। ফলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকারীর নাম না দিয়েই ফলক তৈরি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

তিনি জানান, ফলক উম্মোচনের আগে প্রধান উপদেষ্টা প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে যাবেন। সেখানে তিনি নৌপরিহণ, বন্দর ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে এক সভায় যোগ দেবেন। এরপর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এসে কালুরঘাটে রেল ও সড়ক সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

ফলক উম্মোচন শেষে প্রধান উপদেষ্টা কাপ্তাই সড়কের নজুমিয়া হাট হয়ে হাটহাজারী উপজেলার পৈতৃক বাড়ি শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে যাবেন। সেখানে তিনি পারিবারিক কবরস্থানে জেয়ারত করবেন। পরে এলাকাবাসী ও আত্নীয়স্বজনের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের কথা রয়েছে। সেখান থেকে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিবেন।

কালুরঘাট সেতু প্রকল্পের পরিচালক জানান, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর তাদের দ্বিতীয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর দ্বিতীয় রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। যা বাস্তবায়ন করবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

প্রকল্পটির পরামর্শক নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এতে আটটি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়ার পর এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) ডাকা হয়েছে। দু‘ধাপে এ নিয়োগ স¤পন্ন করতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগবে। এরপর জমি অধিগ্রহণ ও প্রকল্পের ডিটেইল ডিজাইন চূড়ান্ত করে ২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে ভৌতকাজ শুরু করবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যের (মূল সেতু) সেতুটি ২০৩০ সালের মধ্যে নির্মাণ শেষ করতে চাইছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

কালুরঘাট সেতুর প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী, কর্ণফুলী নদীর ওপর বিদ্যমান রেলসেতুর ৭০ মিটার উজানে নির্মিত হবে নতুন সেতুটি। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ১১ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১০০ ফুট। তবে নদীর ওপর মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে মাত্র ৭০০ মিটার। উভয় পাশে সাড়ে চার কিলোমিটার করে ভায়াডাক্ট নির্মাণ হবে। এক্সট্রা ডোজ টাইপ সেতুটির একপাশে দুটি ডুয়াল গেজ রেলপথ ছাড়াও অন্য পাশে স্ট্যান্ডার্ড মানের দুই লেনের (প্রতিটি লেন ১৮ ফুট) সড়ক ছাড়াও উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ (পাঁচ ফুট করে) পথচারী পারাপারের সুব্যবস্থা রাখা হবে। সেতুটির নদীর অভ্যন্তরে পাঁচটিসহ মোট সাতটি ¯প্যান থাকবে। পানি থেকে সেতুর উচ্চতা ১২ দশমিক ২ মিটার।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নতুন সেতু দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে প্রতিদিন ২০ জোড়া ট্রেন এবং দিনে প্রায় ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। এর মাধ্যমে আনুমানিক ১০ মিলিয়ন মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাটে যে সেতুটি আছে, এর বয়স প্রায় শত বছর। জরাজীর্ণ এ সেতুকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে একটি নতুন সেতু নির্মাণের জন্য দক্ষিণ চট্টগ্রামের কোটি মানুষের স্বপ্ন গত সাড়ে তিন দশকের। রাজনৈতিক সরকারগুলোর আমলে নানা জটিলতায় দীর্ঘসূত্রিতার পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছেন।

এর মধ্য দিয়ে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার পূর্বাংশসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্তত এক কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। এতে বোয়ালখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসী উৎফুল্ল। দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল পেয়ে সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরদিন আয়োজন করা হয়েছে আনন্দ মিছিল।

বৃহ¯পতিবার (১৫ মে) সকাল ৯টায় বোয়ালখালীর সর্বস্তরের নাগরিক সমাজ ও বোয়ালখালী কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে এ আনন্দ মিছিলে বের হবে। মিছিলটি কালুরঘাট সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে পূর্ব প্রান্তে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে।

আনন্দ মিছিলে যোগ দিতে বোয়ালখালী কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল মোমিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মুস্তফা নঈম বোয়ালখালীর সর্ব সাধারণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। কালুরঘাট সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে শুকরিয়া আদায় এবং সেতুর নির্মাণকাজ সুন্দর ও সূচারুরূপে যাতে দ্রুত স¤পন্ন হয়; শুক্রবার (১৬ মে) বোয়ালখালীর সকল মসজিদে জুমার নামাজের পর দোয়া ও বিশেষ মোনাজাত করার জন্য সকল মসজিদের খতিবদের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়। একইভাবে বোয়ালখালীর অপরাপর ধর্মালম্বীদের প্রতিও বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়, তারা যেন সেতু নির্মাণকাজ সুস¤পন্ন হওয়ার বিষয়টি প্রার্থনায় রাখেন

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

No more posts to show