শুক্রবার- ৪ জুলাই, ২০২৫

প্রত্যাহার সেই ওসি, তবুও মাঠে এনসিপি-বৈছাআ নেতাকমীরা

প্রত্যাহার সেই ওসি, তবুও মাঠে এনসিপি-বৈছাআ নেতাকমীরা

ক রাত এক দিন উত্তাপ ছড়িয়ে অবশেষে প্রত্যাহার হলেন চট্টগ্রামের পটিয়া থানার সেই ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর পলাশ। বুধবার (২ জুলাই) মধ্যরাতেই তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

নতুন (ওসি) হিসেবে পটিয়া থানায় তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন পার্শ্ববর্তি চন্দনাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) যুযুৎ যশ চাকমা। ওসি প্রত্যাহার আদেশের পর রাতেই সড়ক ছেড়ে ঘরে ফিরে যান জাতীয় নাগরিক পার্টি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈছাআ) নেতাকর্মীরা।

তবে ওসি প্রত্যাহারে চালাকি দেখছেন বলে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিকেলে ফের মাঠে নেমেছেন এনসিপি-বেছাআ নেতাকর্মীরা। নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেটে করেছেন বিক্ষোভ। এই মিছিলে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, হেফাজতে ইসলাম, যুবশক্তি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশন, ইসলামিক দাওয়াহ মুভমেন্ট, এসএডি, পুনাব, পুসাব, জুলাই ঐক্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ছাত্র-যুব সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এর আগে সংবাদ সম্মেলন করে ওসি প্রত্যাহারে অসন্তুষ্টির কথা জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জোবেইরুল হাসান আরিফ বলেন, আমরা বলেছিলাম চট্টগ্রামের এসপিকে অপসারণ করার কথা। পুলিশ সংস্কার বিষয়ক একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া। থানায় চিহ্নিত কোনো আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ-যুবলীগকে সন্ত্রাসী হিসেবে আমরা পরিচয় করিয়ে দিলে তাকে যদি পুলিশ গ্রেপ্তার না করে, এ ব্যাপারে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা যাতে সুস্পষ্টভাবে আইনি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ওসি নাজমুন নূরকে কেবল রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে এটা তো আমাদের দাবি ছিল না। তাকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করে আইনি বিচারের আওতায় আনতে হবে-এটাই দাবি ছিল আমাদের। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন করল কি?

প্রশাসন ছাত্রলীগের স্টেকহোল্ডার হিসেবে আর্বিভূত হয়েছে উল্লেখ করে জোবেইরুল হাসান আরিফ বলেন, আপনারা জানেন আমাদের এ দাবিগুলো খুব আংশিক পর্যন্তই তারা সর্বোচ্চভাবে আমাদেরকে বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন। আংশিকভাবে যা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাও নূন্যতম না। আমরা দেখেছি তারা প্রহসনের মতো করে এক ধরনের প্রমশনের ব্যবস্থা করেছে ওসিকে। আমরা দেখেছি বর্তমান প্রশাসন সহযোগিতা করছে ছাত্রলীগকে কীভাবে নেতৃত্ব দেওয়া যায়। বর্তমান প্রশাসন ছাত্রলীগের স্টেকহোল্ডার হিসেবে আর্বিভূত হয়েছে। আমরা দেখেছি বর্তমান প্রশাসন ছাত্রলীগের গডফাদার হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশে।

ফলে পুলিশ সংস্কার আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করেন জোবেইরুল হাসান আরিফ। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টায় নগরীর দুই নম্বর গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি স্যানমার শপিং মল হয়ে ষোলশহর এসে শেষ হয়। মিছিলে যুক্ত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, হেফাজতে ইসলাম, এনসিপি, যুবশক্তি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশন, ইসলামিক দাওয়াহ মুভমেন্ট, এসএডি, পুনাব, পুসাব, জুলাই ঐক্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ছাত্র-যুব সংগঠন।

এর আগে ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর পলাশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টের অভিযোগ এনে পটিয়া থানা থেকে প্রত্যাহারের দাবিতে বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন নেতা-কর্মীরা। ফলে খুলশী এলাকায় সড়কের দু‘পাশে তীব্র যানজট ও চরম জনদুর্ভোগ তৈরি হয়।

এর আগে বুধবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে পটিয়া থানার মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে থানা ঘেরাও করেন বৈছাআ নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ¯ে¬াগান দেন। আবার বৈছাআ নেতা-কর্মীদের একটি অংশ সকাল সাড়ে ১০টায় পটিয়া থানার সামনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে। তারাও মহাসড়কের ওপর বসে স্লোগান দেন। এতে মহাসড়কের দু‘পাশে যানজট সৃষ্টি হয়।

এনসিপি ও বেছাআ নেতা-কর্মীরা জানান, ১ জুলাই মঙ্গলবার দিনগত রাত নয়টার দিকে পটিয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে দীপঙ্কর নামে ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটক করে বৈছাআ নেতা-কর্মীরা। পরে তাকে পটিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়। তবে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করতে অনীহা দেখায় পুলিশ। পুলিশ বলছে, তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। অথচ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি হামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

এ নিয়ে বেছাআ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে নেতা-কর্মীরা পুলিশের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে বৈছাআর ৬ নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ওই ছাত্রলীগ নেতাকে হেফাজতে নেয়। লাঠিচার্জ নিয়ে ফের উত্তেজনার একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আবার সংঘর্ষে জড়ায় দু‘পক্ষ। এতে পুলিশের লাঠিচার্জে বৈছাআর আরও ৯ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় বুধবার সকাল থেকে পটিয়া থানা ঘেরাও ও থানার সামনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম মহানগরের জাকির হোসেন সড়কের খুলশী ৩ নম্বর এলাকায় চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে এনসিপি ও বৈছাআ নেতা-কর্মীরা।

প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ কার্যালয় থেকে নিচে নেমে এসে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার, পটিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ও পটিয়া থানার ওসিকে অপসারণসহ একগাদা দাবি জানান। এর মধ্যে ডিআইজি ওসিকে অপসারণের দাবি মেনে নিলে রাত ৮ টার দিকে সড়ক ছেড়ে ঘরে ফিরে যান এনসিপি-বেছাআ নেতাকর্মীরা।

এনসিপি ও বৈছাআ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, পটিয়া থানার ওসি নাজমুন নুর পলাশ আওয়ামী লীগের প্রকৃত দোসর। তিনি দলটির ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিতেন, তাদের গ্রেপ্তারে অস্বীকৃতি জানাতেন। আমরা নিজ উদ্যোগে এদের কাউকে আটক করে দিলেও তিনি তালবাহানা শুরু করেন। উপরন্তু আমাদের লাঠিপেটা করেন।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব রিজাউর রহমান বলেন, ওসি নাজমুন নূর পলাশের এক শ্যালক ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। তার শ্বশুরবাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায়। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর তিনি পটিয়া থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখনও ওসি পলাশের কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ পুলিশ মহাপরিদর্শক সঞ্জয় সরকার বলেন, নেতা-কর্মীদের দাবিগুলো শোনা হয়েছে। পটিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার বাকি অভিযোগের বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর এসপি ও সহকারি পুলিশ সুপারের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে। তাই এ বিষয়ে হেড কোয়াটারের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।

এনসিপি নেতা ইমন সৈয়দ এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা পটিয়া থানার ওসিসহ চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার ও পটিয়া সার্কেল এএসপিকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। ডিআইজি মহোদয় আমাদের দাবি শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। তাই আমরা সকল কর্মসূচি স্থগিত করেছিলাম। এখন দেখছি ওসিকে প্রত্যাহার করা হলেও এতে চালাকি হয়েছে। এ কারণে আমরা ফের বিক্ষোভ শুরু করেছি।

‘পুলিশ-প্রশাসন সংস্কার আন্দোলন’ এর আত্নপ্রকাশ
পুলিশ ও প্রশাসনের দুর্নীতি, দলীয়করণ এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে সার্বিক সংস্কারের দাবিতে চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিক আত্নপ্রকাশ করলো নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম পুলিশ-প্রশাসন সংস্কার আন্দোলন।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ছাত্র-যুব ও ইসলামপন্থী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত এই প্ল্যাটফর্ম আত্নপ্রকাশ করে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় নগরের ২ নম্বর গেইটের বিপ্লব উদ্যানে আত্নপ্রকাশ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজকেরা মিছিলটিকে সংস্কার সংগ্রামের প্রথম রাজপথিক সওয়ার হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এনসিপির চট্টগ্রাম মিডিয়া সেলের মুখপাত্র আরফাত আহমেদ রনি জানান, এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, হেফাজতে ইসলাম, এনসিপি, যুবশক্তি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশন, ইসলামিক দাওয়াহ মুভমেন্ট, এসএডি, পুনাব, পুসাব, জুলাই ঐক্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ছাত্র-যুব সংগঠন।

তিনি বলেন, এই প্ল্যাটফর্ম চার দফা মূল দাবির ভিত্তিতে কাজ করবে। পুলিশ ও প্রশাসনে সীমাহীন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দলীয় প্রভাব চলে আসছে, যা জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনগণের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এখন সময় এসেছে বাস্তব সংস্কারের। যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সংস্কারে ব্যর্থ হয়, তবে রাজপথ থেকেই আমরা চূড়ান্ত বাস্তব সংস্কারের সংগ্রাম চালিয়ে যাব।

ঈশান/খম/মসু

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page