মঙ্গলবার- ১৯ আগস্ট, ২০২৫

শোক-শ্রদ্ধায় চট্টগ্রামে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি পালন

শোক-শ্রদ্ধায় চট্টগ্রামে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি পালন

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পালিত হলো স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের দিনটি। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের উদ্যোগে শহিদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, জিয়ারত, মিছিল, সভা-সমাবেশসহ আরও নানা আয়োজনে দিনটি পালন করা হয়।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর দামপাড়ায় গরীবুল্লাহ শাহ মাজারে শহিদ মোহাম্মদ আলমের কবর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কবর জিয়ারত করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, জুলাই আন্দোলনের শহিদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। তাদের আত্নত্যাগের আদর্শই আমাদের পথ দেখাবে গণতন্ত্রের পথে ফিরে যাওয়ার লড়াইয়ে। আমরা অনেকবার অভ্যুত্থান দিবস পালন করেছি, আর নয়। এবার আমাদের স্বপ্ন একটি দুর্নীতিমুক্ত, মৌলিক অধিকার ও গণতন্ত্রস¤পন্ন বাংলাদেশ, এটা বাস্তবায়ন করতেই হবে।

মেয়র বলেন, গত ১৬ বছর ধরে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো নির্যাতনের শিকার হয়েছে, আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছে। আমরা নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে ছিলাম, একাত্তরে আমাদের পূর্বসূরিরা মুক্তিযুদ্ধে লড়েছে, চব্বিশে আমাদের সন্তানরা শহিদ হয়েছে। বারবার কেন আমাদের গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করতে হবে? গণতন্ত্র ধ্বংস করে কেউ টিকতে পারে না।

এ সময় ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান মোকাবেলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এরপর অভ্যুত্থানে নিহতদের আত্নার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন মেয়র। এছাড়া নগরীর টাইগারপাসে চসিক কার্যালয়ে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সকালে নগরীর বাকলিয়ার রসুলবাগ এলাকায় মোহাম্মদ আলমের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। প্রথমে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দিন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম শ্রদ্ধা জানান।

এরপর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ, পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানানো শেষে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। পরে শহিদদের আত্নার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। পরে সরকারি আরও বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে পু®পস্তবক অর্পণ করা হয়।

রসুলবাগের কর্মসূচি শেষে নগরীর গরীবউল্লাহ শাহ জামে মসজিদ কবরস্থানে গিয়ে শহিদ শহীদুল ইসলামের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক। দুপুরে সার্কিট হাউসে জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জুলাই অনির্বান ও দ্যা আর্ট অব ডেমোক্রেসি নামে দুইটি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রামের আনোয়ারার কালাবিবির দিঘিতে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিজয় মিছিল বের করেন। মিছিল শেষে সমাবেশে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম বলেন, বিএনপির বিগত শাসনামলের মতো সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শাসনভার তারেক রহমানের হাতে দিতে হবে।

মিছিলটি কালাবিবির দিঘির মোড় থেকে শুরু হয়ে চাতরী চৌমুহনী বাজার প্রদক্ষিণ করে টানেলের মোড়ে এসে শেষ হয়। বিজয় মিছিলে উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম মনজুর উদ্দিন চৌধুরী, এডভোকেট ফৌজুল আমিন চৌধুরী, ভিপি মোজাম্মেল, দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহাজাহান, বরুমচড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির চৌধুরী আনচারসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।

এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের বর্ষপূতিতে নগরীতে জুলাই জাগরণ নবউদ্যমে বিনির্মাণ র‌্যালি বের করে ইসলামী ছাত্রশিবির। নগরীর বহদ্দারহাট এলাকা থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে র‌্যালি ষোলশহর দুই নম্বর গেইটে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

সমাবেশে বর্তমান সরকারের কেউ কেউ আন্দোলনের অংশীদারদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে অভিযোগ করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সমাজসেবা স¤পাদক আব্দুল মোহাইমিন পাটোয়ারী বলেন, এই অপপ্রয়াস শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী। নতুন বাংলাদেশে এই বেঈমানদের কোনো স্থান হবে না।

র‌্যালিতে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন রনি, মহানগর উত্তর সভাপতি তানজীর হোসেন জুয়েল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মোহাম্মদ আলীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

একই কর্মসূচির আওতায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ইসলামী ছাত্রশিবির লোহাগাড়ার ঠাকুরদিঘী থেকে পদুয়া পর্যন্ত র‌্যালি করেছে। এতে শিবিরের দক্ষিণের সভাপতি আসিফুল্লাহ মুহাম্মদ আরমান, সাবেক সভাপতি আলী হোসাইন, সাবেক জেলা সেক্রেটারি মুহাম্মদ আবু সুফিয়ান তৈয়ব হোসাইন বক্তব্য রাখেন।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page