
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের লাকসাম-নোয়াখালী রেলগেটের সংস্কার কাজ হওয়ার কথা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। কিন্তু সেই কাজ করছেন অসহায় রেলকর্মীদের দিয়ে। আর ঠিকাদারের নামে সংস্কার কাজের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিএন)-১ আবু রাফি মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোছাইন।
এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী অসহায় রেলকর্মীদের। ভুক্তভোগীরা জানান, গত ১৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে ১৫ আগস্ট শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টা লাকসাম-নোয়াখালী রেলগেটের সংস্কার কাজ করানো হয়। তখন এ কাজ করেন লাকসাম-চাঁদপুর রুটের এলসি-১, এলসি-২ ও এলসি-৩ এবং লাকসাম-নোয়াখালী রুটের এলএন-১, এলএন-২ ও এলএন-৩ — এই ছয়টি গ্যাংয়ের মোট ৩৬ জন ওয়েম্যান।
রেলওয়ের এই শ্রমিকরা রাতভর পরিশ্রম করলেও তাদের দেয়া হয়েছে নগদ হাজিরা মাত্র ২০০ টাকা। আর রাতের খাবার হিসেবে দেয়া হয় নিম্নমানের ভাত, এক টুকরো মুরগি, এক টুকরো আলু আর সামান্য ঝোল। পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন হেডমেট রমজান আলী। আর তত্ত্ববধান করেন সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আকবর আলী।
ওয়েম্যানরা জানান, নিয়ম মোতাবেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই সংস্কার কাজ করার কথা। কিন্তু ঠিকাদারের কোন অস্তিত্ব নেই এখানে। রেলওয়ের কর্মী দিয়ে এ কাজ করানো সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা যোগসাজশে এই অপকর্ম চালিয়ে আসছে। আর অসহায় রেলকর্মীদের দাস বানিয়ে তাদের শ্রমের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাজের হেডমেট রমজান আলীর কাজের বিষয়টি স্বীকার করেন। এমনকি কাজের হাজিরা হিসেবে ২০০ টাকা ও নিম্নমানের খাবার দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রমজান আলী বলেন, সংস্কার কাজটিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দেখানো হলেও তা কাগজে-কলমে। বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব নেই।
ডিএন-১ প্রকৌশলী আবু রাফি মোহাম্মদ ইমতিয়াজ কারসাজি করে সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলী আকবর আলীর তত্ত্ববধানে এই সংস্কার কাজ করছেন। সংস্কার কাজের সময় ডিএন-১ প্রকৌশলী একবারের জন্যও ছিলেন না। তবে এ কাজের অর্থ লোপাটে প্রকৌশলী আবু রাফি মোহাম্মদ ইমতিয়াজ পুরোপুরি জড়িত। এটা নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে কানাঘুষা চলছে বলে জানান হেডমেট রমজান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ আবু রাফি মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোছাইন বলেন, এখানে হোছাইন নামে একজন ঠিকাদার কাজ করছে। রেলের কর্মীরা শুধু উপস্থিত ছিল, কেউ কাজ করেনি। এরা মিথ্যা কথা বলছে। আর এ কাজের সাথে আমি কেন? আমার আগে আরও দুই কর্মকর্তা আছে। অনিয়ম করলে তারা করছে। আমাকে দায়ী করছেন কেন?
কাজটি কত টাকার ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে আমার সেটা জানা নেই। কাজটি চলমান রয়েছে। কর্মীরা সবেমাত্র গেইট খুলেছে। এখানে কার্পেটিংয়ের কাজ রয়েছে। তবে কাজ কতদিনে শেষ হবে জানতে চাইলে তাও জানেন না বলে জানান তিনি।
প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভাই সব তথ্য মিথ্যা, আপনি এ নিয়ে নিউজ করে আমাকে কালারিং করবেন কেন? তাছাড়া আপনার সাথে তো আমাদের সু-সম্পর্ক রয়েছে। কী রকম সু-সম্পর্ক জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন আপনারা অফিসে আসলে কি আমরা চা-পানি খাওয়াই না। প্রত্যুত্তরে চা-পানি কখনও খাইনি বললে তিনি একরকম অসভ্য ভাষায় কথাবার্তা বলা শুরু করেন।
একজন বিভাগীয় প্রকৌশলীর এমন আচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে অবস্থিত ডিএন-১ কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, ওই কর্মকর্তা চট্টগ্রামের বাশঁখালীর সন্তান। ওনার ভাষা স্বভাববশত একটু অসভ্য টাইপের। তাঁর খারাপ ভাষায় অফিসের লোকজনও অতিষ্ঠ। জীবনের প্রয়োজনে অফিসে চাকরি করছি। পারলে চাকরি ছেড়ে পালাতাম।
ঈশান/খম/সুম
(বি: দ্র: রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিএন)-১ আবু রাফি মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোছাইনের নানা অনিয়ম ও দূর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে দৈনিক ঈশান। দ্বিতীয় পর্বে আসছে টেন্ডারের কমিশন বাণিজ্য নিয়ে। প্রিয় পাঠক চোখ রাখুন দৈনিক ঈশানে)