
এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রক থাকার সময় ইসলামী ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া প্রায় সাড়ে চার হাজার কর্মকর্তাকে বিশেষ সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষার নামে চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়ায় ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়ে ইসলামী ব্যাংকের এসব কর্মকর্তা। যাদের সবাই চট্টগ্রামের বাসিন্দা। যারা চাকরিচ্যুতি ঠেকাতে গত কয়েকদিন ধওে চট্টগ্রামে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
তারা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চাকরিচ্যুতির ফাঁদ হিসেবে বিবেচিত বিশেষ সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষাও বর্জন করেছেন। এর ফলে গত রবি ও সোমবার (২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর) সারাদেশে ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনার পর রোববার রাতে এনসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যুগ্ম সমন্বয়কারী আরিফ মঈনুদ্দিনের পাঠানো এক বিবৃতিতে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি সম্প্রতি একটি বিশেষ মহল ইসলামী ব্যাংকের পাঁচ হাজার ৪৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একযোগে চাকরিচ্যুত করার অন্যায় প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ প্রচেষ্টা শুধু অনৈতিকই নয়, চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের প্রতি গভীর বৈষম্যমূলক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।
আমরা লক্ষ্য করেছি, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে নিয়োগপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মচারীদের একটি গোষ্ঠীভিত্তিকভাবে টার্গেট করে চাকরিচ্যুত করার পাঁয়তারা চলছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভুক্তভোগী ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তিন দফা দাবি জানায় এনসিপি।
এর মধ্যে আছে- ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, পরীক্ষার নামে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চাকরিচ্যুত না করে কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা এবং ঢালাওভাবে চট্টগ্রামের বাসিন্দা এমন কর্মকর্তাদের টার্গেট করা থেকে বিরত থাকা।
এ ছাড়া এনসিপি এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম মাসুদকে ফ্যাসিবাদের দোসর উল্লেখ করে তার বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারির বিচার দাবি করেছে। এমনকি বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে কার্যকর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি করেছেন।
উল্লেখ্য, দেশের বেসরকারি আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক আওয়ামী লীগ সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি নিয়ন্ত্রণে নেয় এস আলম গ্রুপ, যেটি আগে রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্টদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক আগের পরিষদ ভেঙে দিয়ে ইসলামী ব্যাংককে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে। নতুন পরিষদ আসার পর শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তার বিশেষ সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেয় ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক বলে জানানো হয়।
কিন্তু পরীক্ষার জন্য মনোনীতদের অভিযোগ, ব্যাংকে ওই পদগুলোতে প্রায় আট হাজারের মতো কর্মকর্তা থাকলেও কেবল ২০১৭ সালের পরে নিয়োগপ্রাপ্তদের পরীক্ষা জন্য সার্কুলার দেওয়া হয়েছে। এই পরীক্ষার আড়ালে ব্যাংকটিতে কর্মরত চট্টগ্রামের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তাকে ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনার অভিযোগ করেন তারা।
এ অবস্থায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে প্রায় শতভাগ বিশেষ সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা বর্জন করে। এরপর সপ্তাহের কর্মদিবস শুরুর প্রথমদিনে রোববার সকাল থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ইসলামী ব্যাংকের কয়েকটি শাখায় তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফলে সকাল থেকে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার পৌরসদরে ইসলামী ব্যাংকের শাখা কার্যালয়ে দিনভর কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এ নিয়ে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেও ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ব্যাপক উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া গেছে।