
চট্টগ্রাম মহানগরের পাহাড়তলীতে ছুরিঘাতে খুন হওয়া আজাদুর রহমান আজাদকে হত্যার আগে রাতেই প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটনের ভাই আবদুল মান্নান খোকনের বাসায় বৈঠক করে পরিকল্পনা করেন খুনিরা। এরপর ভোরে হামলা চালান। হামলার পর তারা আবারও খোকনের বাসায় যান। পরে তারা একে একে গা ঢাকা দেন।
এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেফতার নগরীর হালিশহরের মো. আবুল হাসনাত রাজু ও পাহাড়তলী এলাকার পানির কল এলাকার মো. ওসমান এমন তথ্য দিয়েছে বলে জানান নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর খোকনের বাসায় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর আগে ধারণ করা একটি ভিডিওতে আজাদ তার ওপর হামলাকারী হিসেবে এই দু’জনের নাম বলে যান।
খুনিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর ও পশ্চিম) আলী হোসেন মঙ্গলবার (৬ জুন) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আজাদ ও তার ভাইয়ের সঙ্গে টমি নামে এক যুবকের ঝগড়া হয়েছিল। ভোররাতে টমি, ফাহিম, ওসমান ও রাজু মোটর সাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আজাদের সাথে বিতণ্ডায় জড়ায়। এরপর মোটরসাইকেল থেকে নেমে টমি আজাদকে প্রথম ছুরিকাঘাত করে পরে ফাহিমসহ অন্যরা তাকে আঘাত করে।’
‘ঘটনার পর তারা টমির বাসায় গিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি ছোরা রেখে আসে এবং পরনের কাপড় পাল্টে সেগুলো ভিজিয়ে রাখে। আমরা টমির বাসা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরা দুটি উদ্ধার করি। পলাতক টমিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
তিনি আরও বলেন, খুনিরা আবদুল মান্নান খোকনের অনুসারী। হত্যাকাণ্ডের আগে পরে বিভিন্ন সময় খোকনের সাথে খুনিদের একটা যোগাযোগ আমরা দেখতে পেয়েছি। তাকে আমরা আইনের আওতায় আনবো। তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো।
গত ২৮ মে ভোরে নগরীর পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া নয়াবাজার মুজিবুর রহমান প্লাজার সামনে খুন হন আজাদুর রহমান আজাদ। নিহতে স্ত্রী ও স্বজনদের অভিযোগ, চাঁদা নিতে বাধা দেওয়ায় প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটনের ছোট ভাইয়ের অনুসারীরা তাকে খুন করেছে। এ ঘটনায় আজাদের স্ত্রী নাজমা আক্তার বাদি হয়ে পাহাড়তলী থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলায় আসামি করা হয়—ওসমান, রাজীব, রাজু ও ফয়সালকে। পরদিন রাঙামাটি থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। গত রবিবার (৫ জুন) খুলনার পাইকগাছা থানার শোলাদানা এলাকা থেকে রাজু ও ওসমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম স্বামীর শোকে বিলাপ ধরে কাঁদছেন, এমন একটি ভিডিওতে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘হোসেন, ফয়সাল, রাজু, ওসমানসহ সাতজনের ফাঁসি চাই। যে আমার বুক খালি করছে আল্লাহ তাদের বুক খালি করে দিক। এরা চাঁদাবাজি, ডাকাতি, চুরি করে। লিটন কমিশনারের কারণে এই ছেলেপেলে এসে আজকে আমার স্বামীকে মেরে ফেলছে। আমার দুইটা মেয়েকে এতিম করে ফেলেছে। লিটন কমিশনারের ফাঁসি চাই। কিশোর গ্যাংয়ের ফাঁসি চাই। কিছুদিন আগে একটা ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনার উছিলায় আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে ওরা। চাঁদা নিয়ে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে। ওটা সমাধানও হয়ে গেছে। তারপরও আমার স্বামীকে একা পেয়ে ওরা মেরে ফেলছে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, কাউন্সিলর আবদুস সুবর লিটনের ছোট ভাই আবদুল মান্নান খোকনের বেপরোয়া-বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ভীতসন্ত্রস্ত ওই এলাকার সাধারণ মানুষ। এলাকায় নিত্য চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করে বেড়ায় খোকনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যরা। তারা দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন দোকানে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জুয়া ও মাদকের কারবার করে এলাকায় রীতিমতো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে অভিযোগ আছে।
আব্দুল মান্নান খোকনের বিরুদ্ধে নগরের পাহাড়তলীর ভেলুয়ার দীঘিতে বড়শি প্রতিযোগিতার আড়ালে দিনে-দুপুরে জমজমাট জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ আছে, বড়শি প্রতিযোগিতার নামে এ জুয়ার আসরের আয়োজন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন খোকন।
এর আগে ২০২১ সালের ৩ মে হালিশহর থানার ঈদগা বড়পুকুরপাড় এলাকার একটি অসহায় পরিবারের উপর হামলার অভিযোগ উঠে আবদুল মান্নান খোকনের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, তাদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন খোকন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নিজে উপস্থিত থেকে কিশোরগ্যাং দিয়ে প্রকাশ্যে ওই পরিবারের উপর হামলা চালান খোকন। এসময় একটি রিকশা গ্যারেজ এবং ঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি ওই পরিবারের সদস্যদের মারধরের অভিযোগ তুলেন ভুক্তভোগীরা।











































