
আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে খেলে বৃহ¯পতিবার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টেনে দিয়েছিলেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। তামিমের এমন আকস্মিক বিদায়ে বড় ধাক্কার মুখে পড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট।
কারণ তামিমকে অধিনায়ক রেখেই চলতি বছরের এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ পরিকল্পনা করেছিল বাংলাদেশের টিম ম্যানেজম্যান্ট। সব পরিকল্পনায় যেন জল ঢেলে দেয় তামিমের অবসর। এ নিয়ে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের ক্রীড়াঙ্গন ও ক্রীড়াপ্রেমিদের মাঝে তৈরি হয়েছে বিষাদময় নানা প্রতিক্রিয়া।
তবে ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে শুক্রবার (৭ জুলাই) সন্ধ্যায় এই বিষাদ আবার আনন্দে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পর অবসর প্রত্যাহারের খবরে বাঁধভাঙা আনন্দ উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে চট্টগ্রামের তামিম ভক্তরা। এর আগে বিকেলের দিকে তামিমকে মাঠে ফিরতে মানববন্ধন করছিলেন চট্টগ্রামে দর্শকরা।
আর এই মানববন্ধনের শেষ পর্যায়ে শুনতে পান অবসর ভেঙে মাঠে ফিরছেন তামিম। তাতেই মানববন্ধন ভেঙ্গে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন দর্শকরা। শুরু করেন কোলাকুলি-আলিঙ্গন। শুধু তাই নয়, একে অপরকে খাওয়ানো হয় মিষ্টি। এ যেন এক ঈদের মহামিলন।
এর মধ্যে তামিমের ভক্ত ও ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম অবসর ভেঙে তামিম ইকবাল জাতীয় দলে ফিরুক। এজন্য শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামে তামিমের বাড়ির আশপাশে মানববন্ধন করছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। এ সময় তারা তামিমের ফেরার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগানে এলাকা মুখরিত করে তোলেন।
তামিমের ফেরার দাবিতে ব্যানার নিয়ে র্যালি করেন ভক্তরা। সেখানে তারা তামিম তামিম স্লোগান ধরেন। কেউ কেউ বলছিলেন, তাকে জাতীয় দলে দেখতে চাই, বিশ্বকাপে দেখতে চাই। আর সে কাজটি অল্প সময়ে সম্ভব করে দিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানায়।
এদিকে তামিম ইকবাল ফিরে আসায় আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, তামিমের অবসর ঘোষণাটা অপ্রত্যাশিত। স্বয়ং বিসিবিও সিদ্ধান্তটি মেনে নিতে পারেনি। যে কারণে তাকে অবসর ভাঙার আহ্বান জানায় সংগঠনটি।
তামিম ইকবালের ফেরায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি বলেন, তামিম আমাদের দেশের সম্পদ। চট্টগ্রমের গর্ব। দেশকে এখনো দেয়ার অনেক কিছুই আছে তার। সামনে বিশ্বকাপ। এ সময়ে তার অবসর ছিল দুঃখজনক। তার ফেরায় আমার কাছে ঈদের আনন্দের মতো মনে হচ্ছে।
চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠক এহছানুল হায়দার বাবুল বলেন, তামিমের অবসর ঘোষণা আমাকে কাঁদিয়েছে। এটা কল্পনারও অতীত ছিল। তবে তামিম ফিরে আসায় এখন অনেক খুশি লাগছে। তামিম ভক্ত অনেককে আমি মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছি।
ক্রীড়া সংগঠক ফরিদ আহমেদ বলেন, তামিম ফিরেছে, আশা করছি এবার আমরা বিশ্বকাপ জিতবো। তামিমের অবসরের কষ্টের চেয়ে ফেরার আনন্দটা আমি বেশ উপভোগ করছি। আমি চাই এশিয়া কাপে নয়, তামিম সবধরণের ক্রিকেট খেলুক।
প্রসঙ্গত, তামিম ইকবাল হঠাৎ বৃহ¯পতিবার অবসরের ঘোষণা দেন। এতে ভেঙে পড়েন চট্টগ্রামের ক্রিকেটপ্রেমী ও ভক্তরা। শুরু হয় নানা ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অবসরের কারণে ভক্তরা আঙ্গুল তুলেন হেড কোচ হাথুরুর বিরুদ্ধে। নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন শোবিজসহ সব শ্রেণি-পেশাজীবি মানুষেরাও।
পারিবারিক সূত্র জানায়, তামিম ইকবাল ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়। বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ৭০টি টেস্ট খেলেছেন। ১০ সেঞ্চুরি ও ৩১টি ফিফটিতে ৫১৩৪ রান করেছেন তিনি। ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ২৪১ ওয়ানডে খেলেছেন বাঁ-হাতি এই ওপেনার। ১৪টি সেঞ্চুরি ও ৫৬ ফিফটিতে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৩১৩ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। এছাড়া ৭৮টি টি-২০ খেলেছেন তিনি। গত বছর টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেন ৩৪ বছর বয়সী তামিম। গত এপ্রিলে মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলেন তিনি।