সোমবার- ১৩ অক্টোবর, ২০২৫

চট্টগ্রামে মনোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ফিল্ড সার্ভে শুরু

চট্টগ্রামে মনোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ফিল্ড সার্ভে শুরু

ট্টগ্রাম মহানগরের মনোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ফিল্ড সার্ভে শুরু হয়েছে। নগরীর যানজট নিরসনে মনোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানান চসিকের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, দুপুরে টাইগারপাসে চসিক কার্যালয়ে এ উপলক্ষ্যে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়।

গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী এবং আরব কনট্রাকটরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়ামের প্রধান প্রতিনিধি কাউসার আলম চৌধুরী প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরেন।

মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরের গণপরিবহন খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে চলেছে মনোরেল প্রকল্প। এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামকে দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন তাঁদের। মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর নগরকে কীভাবে সুন্দর ও পরিকল্পিত করা যায়, তার উদ্যোগ নিয়েছেন। যানজট নিরসনের জন্য ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়, স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম চালু, নতুন বাস টার্মিনাল নির্মাণসহ অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে মনোরেল এই সমস্যাগুলোর একটি কার্যকর সমাধান হবে।

আরও পড়ুন :  সিএমপির ‘মানিলন্ডারিং’ তালিকায় ১৪৫ নেতা ও মন্ত্রী-এমপির নাম

মেয়র শাহাদাত হোসেন জানান, প্রস্তাবিত মনোরেল প্রকল্পটির মোট দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার এবং এতে বিনিয়োগ করা হবে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। পুরো অর্থায়ন আনবে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ওরাসকম কনস্ট্রাকশন ও আরব কন্ট্রাক্টরস। এই বিনিয়োগের জন্য সিটি করপোরেশনের কোনো আর্থিক দায় থাকবে না। কেবল প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট ও ভূমি বরাদ্দ দেবে সিটি করপোরেশন।

তিনি বলেন, মনোরেল নির্মাণের জন্য আমরা এরই মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই করেছি। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে প্রকল্পের ফিল্ড সার্ভে শুরু হয়েছে। এরপর পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর কাজ শুরু হবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষে প্রকল্পটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু সাদাত তৈয়বকে। বিডাসহ সব সংস্থার সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু সাদাত তৈয়ব জানান, নগরীর যানজট নিরসনে মনোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ তিনটি রুটে মনোরেল নির্মাণ করতে অন্তত ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে।

আরও পড়ুন :  নির্বাচন কমিশন প্রতীকের সংখ্যা বাড়াতে-কমাতে পারে : সিইসি

প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিদেশি দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইতোমধ্যে সমঝোতা স্মারক চুক্তি (এমওইউ) করেছে সিটি কর্পোরেশন। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে ওরাসকম কনস্ট্রাকশন ও আরব কন্ট্রাক্টরস।

সিটি করপোরেশন ও চুক্তি স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম মহানগরে মনোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বিনিয়োগ করা হবে এনএএস ইনভেস্টমেন্ট ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব ইজিপ্টের মাধ্যমে।

প্রকল্পের আওতায় সম্ভাব্য তিনটি রুট বিবেচনা করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত (বহদ্দারহাট, চকবাজার, লালখান বাজার, দেওয়ানহাট ও পতেঙ্গা হয়ে) ২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার, সিটি গেট থেকে শহীদ বশিরুজ্জামান চত্বর পর্যন্ত (এ কে খান, নিমতলী, সদরঘাট ও ফিরিঙ্গি বাজার হয়ে) ১৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গি বাজার (মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, আন্দরকিল্লা ও কোতোয়ালি হয়ে) পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার।

আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়ামের প্রধান প্রতিনিধি কাউসার আলম চৌধুরী বলেন, মনোরেল নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়েছে। এখন তাঁরা সার্ভে শুরু করেছে। এরপর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করবেন। এই কাজ করতে অন্তত নয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগবে। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন :  নির্বাচন কমিশন প্রতীকের সংখ্যা বাড়াতে-কমাতে পারে : সিইসি

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। এখানে যানজট ও পরিবহনসংকট ক্রমবর্ধমান। মনোরেল একটি আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব সমাধান। আমরা এই প্রকল্পে পূর্ণাঙ্গ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

অনুষ্ঠানে গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামকে একটি স্মার্ট ও টেকসই নগরে রূপান্তরের অংশ হিসেবে মনোরেল প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও নগরবাসীকে নিয়ে একটি ইকোনমিক ফোরাম গঠন করে এই প্রকল্পকে বাস্তবায়নে কাজ করব।

সড়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, মনোরেল হলো এমন একটি রেলওয়ে, যেখানে ট্র্যাকটি একটি একক রেল বা বিম দিয়ে তৈরি। মনোরেল এক চাকার ট্রেন। এক চাকার ওপরই চলে। দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে মনোরেল স্থাপন ও চালু করা সম্ভব।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page