সোমবার- ২০ অক্টোবর, ২০২৫

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে অস্ত্র সরবরাহ দিয়েছেন যুবলীগ নেতা বাবর?

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে অস্ত্র সরবরাহ দিয়েছেন যুবলীগ নেতা বাবর?

ট্টগ্রামে সংঘর্ষের সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণে তিনজন নিহত হয়েছেন। অস্ত্রধারীদের ছবি ও পরিচয় সংবাদমাধ্যমে এসেছে। আর এসব অস্ত্র সরবরাহে নেতৃত্ব দিয়েছেন কথিত যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর।

অথচ পুলিশ এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যদিও সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা ও আহত পরিবারের পক্ষ থেকে আরও দুটি মামলা করা হয়েছে। আর এ মামলায় যাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তাঁরা ছাত্রদল, যুবদল, বাম ছাত্রসংগঠনসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘এই সংঘর্ষের ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে সাড়ে ৭ হাজারের মতো। আর ঘটনার সময় অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাড় দেওয়া হবে না। তবে এটা সময় লাগবে।

শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি, কারা এই অস্ত্রধারী?

প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবারের সংঘর্ষে যেসব অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছে, সেগুলো একটি প্রাইভেটকারে করে সরবরাহ করা হয়েছে। যার নম্বর চট্ট মেট্রো-গ-১৪-৩২২১। এই নম্বরের প্রাইভেটকারটির মালিক যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের ঘনিষ্ঠ জাফর উল্লাহর নামে নিবন্ধন রয়েছে।

আরও পড়ুন :  মাশুল বাড়ায় বন্ধ প্রাইভেট ট্রেইলার, পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা

ঘটনার দিন ওই গাড়িতে করে এসে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক নেতা ও সিআরবির ডাবল মার্ডার মামলার আসামি হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর মিছিলে নেতৃত্ব দেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ একাধিক সোর্স থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, সংঘর্ষে পাঁচ যুবককে প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে জাফর উল্লাহও রয়েছেন। তাঁদের হাতে ছিল দুটি এলজি, দুটি পিস্তল ও একটি শটগান।

পৃথক আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, সংঘর্ষের সময় ওই প্রাইভেটকার ষোলোশহর এলাকায় অবস্থান করছিল। যুবলীগের নেতা–কর্মীরা তখন গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এরপর সেই ব্যাগগুলো কাঁধে নেন বেশ কয়েকজন। এরপর গাড়িটি সেখান থেকে চলে যায়।

আরও পড়ুন :  ওমান থেকে কফিন বন্দি হয়ে ফিরল আট প্রবাসী

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে অস্ত্র সরবরাহ দিয়েছেন যুবলীগ নেতা...

সরেজমিন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে নগরীর মুরাদপুর ও ষোলোশহর রেলস্টেশনে অবস্থান নিতে শুরু করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা। বেলা আড়াইটার পর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মুরাদপুরসহ ষোলোশহর স্টেশনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় মুরাদপুরে অবস্থান করা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। পরে আন্দোলনকারীরা আবার মুরাদপুরে জড়ো হয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা পিছু হটে ষোলোশহর স্টেশনের দিকে চলে যায়। পরে আবার জড়ো হয়ে মুরাদপুরে অগ্রসর হয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য অনুসারে, ওই সময় ছাত্রলীগ–যুবলীগের কয়েকজন গুলি ছুড়তে ছুড়তে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করে। পরে দ্বিতীয় দফা ধাওয়ার সময় একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার তাদের পেছনে ছিল। এর আগে সেই সাদা প্রাইভেটকার থেকে কয়েকটি ব্যাগ নামানো হয়। পরে অস্ত্রধারীরা হেলমেট পরে গুলি ছুড়তে ছুড়তে আন্দোলনকারীদের দিকে এগিয়ে যায়।

আরও পড়ুন :  আন্তর্জাতিক পর্ন তারকা চট্টগ্রামের এক নারী, নজর নেই পুলিশের

ষোলোশহর দুই নম্বর গেট এলাকার এক সংবাদকর্মীর তথ্যমতে, সংঘর্ষের আগে যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ষোলোশহর দুই নম্বর গেট মোড়ে একটি সাদা প্রাইভেট কারে করে এসেছিলেন। পরে সেখানে তিনি নেমে নেতা–কর্মীদের নিয়ে ষোলোশহরমুখী রাস্তায় একটি মিছিলে নেতৃত্ব দেন। কারও ইশারায় পরে তিনি সরে যান।

সংঘর্ষের সময় অস্ত্রধারীদের মধ্যে পাঁচজনের ছবি চিহ্নিত করা গেছে। এর মধ্যে চারজনের দলীয় পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন-যুবলীগের ফিরোজ, জাফর, মিঠু ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দেলোয়ার। এরা যুবলীগের সাবেক নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনির অনুসারী বলে পরিচিত। বাকি একজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে হেলাল আকবর চৌধুরীর মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি সাড়া দেননি। অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ করে এসএমএস পাঠালেও তাঁর সাড়া মেলেনি।     সূত্র : আজকের পত্রিকা।

ঈশান/খম/সুম

আরও পড়ুন

You cannot copy content of this page